• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সুইডেন আতাউর ৩ দিনের রিমান্ডে

সুইডেন আতাউর

সংগৃহীত ছবি

আইন-আদালত

সুইডেন আতাউর ৩ দিনের রিমান্ডে

  • নরসিংদী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ নভেম্বর ২০১৯

নরসিংদীতে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে নানা প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউরের বিরুদ্ধে জমি, মিল কারখানা দখলসহ নানা প্রকার প্রতারণার মাধ্যমে গত ১০ বছরে দেশে বিদেশে গড়ে তুলেছেন প্রায় ৫শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়।

বিভিন্ন সময় মামলা হলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবে পার পেয়ে গেছেন তিনি। তবে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানে সুইডেন আতাউরকে সিআইডি গ্রেপ্তারের পর আতংকে থাকা মানুষগুলো তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য। এদিকে বিতর্কিত সুইডেন আতাউরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ।

এদিকে জালিয়াতি ও প্রতারনা মামলায় সুইডেন আতাউরকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আজ রবিবার দুপুরে শতকোটি টাকার মোল্লা স্পিনিং মিল অবৈধ দখলের মামলায় জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্যাট শারমিন আক্তার পিংকির আদালতে তোলা হলে বিজ্ঞ বিচারক এ আদেশ প্রদান করেন।

মোল্লা স্পিনিং মিল দখলের অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের জালিয়াতি ও প্রতারনা মামলায় গেল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মালিবাগ থেকে সুইডেন আতাউরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুক্রবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট মাইনুউদ্দিন কাদির এর আদালতে তাকে সোপর্দ করা হয়। ওই মামলারর তদন্তকারী সি আই ডি’র কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের বিচারক রোববার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে আজ তাকে আদালতে তোলা হলে আদালতের বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এসময় বিচারক তাকে প্রতিদিন ৪ ঘন্টা করে পরপর ৩দিন জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সুইডেন আতাউরকে ঢাকার মালিবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী শহরের হাজিপুর এলাকার নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আতাউর রহমান গত ২০ বছর পূর্বে অবৈধপথে সুইডেন পাড়ি জমায়। সেখানে এক বৃদ্ধমহিলাকে বিয়ে করে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পত্তি আত্মসাত করে মালিক বনে যান। সেই টাকায় সুইডেনের স্টকহোম ক্রিসেন্টাল সংলগ্ন স্থানে রিও নামে একটি দোকান খুলেন। পরে সে সুইডেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়।

২০০৩ সালের দিকে নরসিংদী শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়ায় ৬ তলা বিশিষ্ট সুইডেন ভিলা ভবন নির্মাণ করে প্রথমে স্থানীয়দের নজরে আসেন সুইডেন আতাউর। এরপর সে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় ব্যবহার করে মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা ভেজাল জমি খুঁজে বেড়ান। কয়েক বছরের ব্যবধানে নরসিংদী বাজারের গেঞ্জিপট্টি মোড়ে অন্যের জমি দখল করে ৫ তলা বিশিষ্ট সুইডেন প্লাজা গড়ে তুলেন। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি সুইডেন আতাউর। প্রভাব খাতিয়ে ২০১৬ সালে শহরের বাগহাটা এলাকার শতকোটি টাকা মূল্যের মোল্লা স্পিনিং মিল সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোড় করে দখল করে নিয়েছে। এই ভাবে সে পাশ্ববতী আমজাদ ভূইয়া ও মতিন মোল্লার নির্মাণাধীন ম্যানচেষ্টার কম্পোজিট নামক একটি কারখানা অবৈধভাবে দখল করতে মালিকদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সুইডেন আতাউর বিএনপির পদধারী কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে শহরের খালপাড় এলাকায় হাবিবুল্লাহ মিয়ার ১২ শতাংশ জমি দখল করেছেন। বাগহাটা এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশ্ববর্তী স্থানের আহমেদ হোসেনের ২০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন। সদর উপজেলার পাঁচদোনায় মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা ৬৯ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন। সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের কান্দাইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০০ বিঘা জমি দখল করতে মালিকদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ২০ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন।

সুইডেন আতাউরের ঘনিষ্ঠজনেরা জানায়, সুইডেন আতাউরের ঢাকার অভিজাত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৮ শতাংশ জমির একটি প্লট রয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গীতে রযেছে তাঁর ১০ শতাংশ জমি। নরসিংদী শহরের দগরিয়ায় মিস্টিক ফার্মাসিটিক্যালের পিছনে ৮০ শতাংশ জমি, ব্রাহ্মন্দী পুরাতন টাউন হলের পিছনে ৫ শতাংশ জমি ছাড়ায় আরও নামে বেনামে অনেক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সুইডেন বাংলা টেক্সটাইল মিলে কটন সুতা ব্যবহার করা হলেও বন্ড সুবিধার মাধ্যমে টেনসিল, পলিষ্টার ও বিসকস তুলা আমদানী করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে সে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

রাজনীতি পরিচয় ব্যবহার করে সুইডেনে সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীসহ বড় বড় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করে দেশে এর প্রভাব বিস্তার করে। একই সঙ্গে সুইডেন আতাউর ইতিপূর্বে পৌরসভাসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পোষ্টার ব্যানার করে নিজেকে নেতা হিসেবে জাহির করেছেন।

সুইডেন আতাউরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী পরেশ সূত্রধর জানান, কান্দাইলের হিন্দু সম্পত্তিটি আতাউরসহ আমরা ৩ জন কিনেছি। কিন্তু আতাউর জমির টাকা দিলেও সেই জমি আমার নামে কিনেছেন। পুরো জমি এখনো আমাদের দখলে নেই। অনেক জমি বেদখল। সেগুলো উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে।

মোল্লা স্পিনিং মিলের পরিচালক রাশেদুল হাসান রিন্টু বলেন, সুইডেন আতাউর আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা আমাদের মিলসহ অসহায় অনেক মানুষের জমি দখল করে নিয়েছে। এভাবে সে অবৈধভাবে কয়েকশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চলমান শুদ্ধি অভিযানে সে গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমরা আমাদের বেদখল হওয়া মিল ফিরে পেতে সরকারের সহযোগীতা কামনা করছি।

জানতে চাইলে নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লে. কর্ণেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু বলেন, বিতর্কিত কোন নেতার দায় আওয়ামী লীগ কেন নিবে ? আতাউরের অপরাধগুলো আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হলে আমরা বিতর্কিত লোককে দলের মধ্যে স্থান দিয়ে রাখতে পারিনা। তার বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে, আতাউর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় তার ব্যাখ্যা দিয়েছে সুইডেন আওয়ামী লীগ। গত ১ নভেম্বর সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জাহাঙ্গীর কবির ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ফরহাদ আলী খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস নোটে জানানো হয়, আতাউরকে সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। আতাউর রহমান সুইডেন আওয়ামী লীগের বর্তমান বা সাবেক কোনো কমিটিরই সভাপতি নন। সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ কর্তৃক অনুমোদিত ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বীকৃত সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জাহাঙ্গীর কবির ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ফরহাদ আলী খান। গ্রেপ্তার হওয়া আতাউর রহমান প্রায় তিন বছর ধরেই সুইডেন ছেড়ে সপরিবারে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সুইডেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads