• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

আইন-আদালত

‘ডাক্তাররা তো ব্যবসা নিয়ে পড়ে আছেন’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চিকিৎসকদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, আমাদের জীবন পিওন-চাপরাশির ওপর ছেড়ে দিয়ে আপনারা প্রাইভেট প্র্যাকটিসে নেমে পড়েন। আপনারা তো ব্যবসা নিয়ে পড়ে আছেন। হাসপাতালে যান তো শুধু হাজিরা দেওয়ার জন্য। পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা দাবি করেন, আপনারা জনগণের বন্ধু। দেশের মানুষ আপনাদের কাছে কী চায়? নিরপরাধ একজন ব্যক্তিকে ধর্ষক বানিয়ে দিতে পারেন আপনারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধর্ষণের প্রতিবেদনে অসঙ্গতি নিয়ে চিকিৎসক ও পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ  এসব কথা বলেন।

নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তে গত বুধবার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। মেডিকেল রিপোর্টে এমন অসঙ্গতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এবং সিভিল সার্জনসহ ১২ জন গতকাল হাইকোর্টে হাজির হন। এরপর আদালত ধর্ষণের ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্টের অসঙ্গতি বিষয়টি পয়েন্ট আকারে তুলে ধরেন।

চিকিৎকদের উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনারা হাসপাতালে আসেন শুধু হাজিরা দেওয়ার জন্য। তারপর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে চলতে পারে না। আপনারা একেক রিপোর্টে একেক তথ্য দিয়েছেন। ভাষাও বোঝা যায় না। সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারেন এমন ভাষায় রিপোর্ট লিখতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে  বলেন, পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু। আমরা আপনাদের কাজকর্মে সেটাই দেখতে চাই। পরে তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসংগতির ঘটনায় দোষ স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহ। তিনি আদালতকে বলেন, আমাদের ফরমগুলোর মধ্যে ত্রুটি আছে। আমরা এগুলো সংশোধন করে নেব। পরে আদালত তাদের সতর্ক করে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। তবে বলে দেন, যে-কোনো সময় আদালত ডাকলে হাজির হতে বাধ্য থাকবেন তারা।

আদালতে শিশুটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহ পরান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম। লিগ্যাল এইডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে। এদিন সকালে ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যের ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে হাজির হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপারসহ ১২ জন। গত ১৭ জানুয়ারি তাদের তলব করেন আদালত। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এ ঘটনায় নাসিরনগর থানায় দায়ের করা মামলা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনোরকমে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে বলা হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। সেখান থেকে দেওয়া আরেক রিপোর্টে বলা হয়, শিশুটির বাহ্যিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরই আরেকটি তথ্য বলছে, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন হয়েছে। এজাহার ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত বলেছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ৬ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিশুটি নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চার সদস্যের চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতন হয়েছে, বিষয়টি প্রশ্নবোধক।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু (৭) ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা গত ১১ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর থানায় এক শিশুর (১২) বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় শিশুটি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত নভেম্বর শিশুটিকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একই সঙ্গে তদন্তকাজ শেষে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত। এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার সিডি (কেস ডকেট) আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মেডিকেল রিপোর্ট ও তদন্ত রিপোর্টে এমন অসঙ্গতি দেখে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads