• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডি ডাকাত: হাইকোর্ট

সংগৃহীত ছবি

আইন-আদালত

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডি ডাকাত: হাইকোর্ট

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পিপলস লিজিংয়ের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে চোর ও ডাকাত বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়ালে যুক্ত এক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারক মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ ঋণখেলাপিদের আইনজীবীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন। আদালতে এদিন উপস্থিত ৫১ ঋণখেলাপির পক্ষে আইনজীবী মুশতাক আহমেদ শুনানি করেন।

এ সময় আইনজীবীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেন, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার এবং এসকে সুর চৌধুরী কী আকাম-কুকাম করলো, সেটা নিয়ে হাইকোর্ট বসে থাকবে না। আদালতের কি আর কোনো কাজ নেই! দুদক কী ব্যবস্থা নিল? আমরা আদেশ দিলাম কতো আগে, আর জানুয়ারি মাসে এসে জানানো হলো, পি কে হালদার বিদেশ পালিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর কাছে আদালত জানতে চান, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের হেড অফিস কোথায়? সেখানে কম্পিউটার, চেয়ার টেবিল কি কিছু আছে? প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, অন্য লোকজন ও পিয়ন আছে? শুনানিতে আরেক খেলাপির আইনজীবী ২৭ কোটি টাকা দিতে সময় চাইলে আদালত পিপলস লিজিংয়ের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, উনার কতো টাকা? আইনজীবী জানান, ১১৬ কোটি টাকা। তখন আদালত বলেন, ‘রাস্তায় যে ক্লায়েন্টরা না খেয়ে আছেন তাদেরকে দেখবে কে?’

আমরা দেখছি হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি-না। আমানতকারীরা আজকে খেয়ে, না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের। একটি কোম্পানি অবসায়ন করতে হলে তার একটা প্রসিডিং আছে। আমরা সেটাও দেখছি। টাকাগুলো উদ্ধারের একটা পথ বের করার চেষ্টা করছি।

পিপলস লিজিং থেকে পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি টাকার ঋণখেলাপিরা তলব আদেশে হাজির না হলে প্রয়োজনে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় অনেক ঋণখেলাপি টাকা পরিশোধে সময় প্রার্থনা করছেন। এরই এক পর্যায়ে ভার্চুয়ালে যুক্ত আইনজীবীকে আদালত বলেন, শাহ আলম একটা চোর, ডাকাত। এর আগে, এই অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং থেকে পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি অর্থের ঋণখেলাপি ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ২৩ ফেব্রুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির হয়ে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছিল। আদালতের সে আদেশের ধারাবাহিকতায় আজ ১৪৩ জন ঋণখেলাপির হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ৫১ জন হাজির হন। বিষয়টি  নজরে আসার পর হাইকোর্ট বলেন, আদালতের তলবে যারা আজ আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে কোর্টে হাজির করা হবে।

নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিচালকদের অর্থ আত্মসাতের কারণে আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের ১০ জুলাই পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অবসায়ন সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ঋণখেলাপিদের তলব করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পায়। এরপর ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এ প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার কোটি টাকার আমানত ছিল। এই টাকা থেকে পিপলস লিজিং এক হাজার ১৩১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে যার মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি হয়। খেলাপি ঋণের মধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগ নিয়ে কানাডায় পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারও (পিকে হালদার) পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক ছিলেন। তাকে দেশে ফেরাতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads