• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
‘ঘুণে খাওয়া বাঁশি’ যেন প্রকৃতির আয়না

ঘুণে খাওয়া বাঁশি : আলম শাইন

সংরক্ষিত ছবি

সাহিত্য

বই পাঠ

‘ঘুণে খাওয়া বাঁশি’ যেন প্রকৃতির আয়না

  • প্রকাশিত ৩০ জুন ২০১৮

কাজী মহম্মদ আশরাফ

আলম শাইন মূলত একজন রম্য লেখক— তিনি ২০০৭ সালের দিকে ‘মাইট্যা বংকের গভর্নর’ নামে একটি রম্যগ্রন্থ লিখে সারা দেশে নাম কুড়িয়েছেন। তারও আগে ‘ওস্তা’ লিখেছেন ক্ষুদ্র আয়ের বৃত্তিজীবীদের নিয়ে। হাজাম সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের সংগ্রাম নিয়ে লেখা এ উপন্যাসটির জন্য তিনি পেয়েছেন ‘মঞ্জুশ্রী সাহিত্য পুরস্কার’। এ ছাড়া তিনি গল্প, উপন্যাসসহ ১৩টি গ্রন্থের লেখক। সমকালীন অনেক দৈনিকে নিয়মিত লিখে চলেছেন পাখি বিষয়ে, বন্যপ্রাণী নিয়ে। পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কলামও লিখছেন নিয়মিত। দেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিকগুলোতে প্রায় হাজার খানেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ছাপা হয়েছে এ যাবৎ। ছোটগল্পও লিখেছেন প্রচুর।

‘ঘুণে খাওয়া বাঁশি’ আলম শাইনের একটি উপন্যাস। এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে  দৈনিক মানবকণ্ঠ ও এনটিভি অনলাইনে। দেশের বাইরে সুদূর আমেরিকার বোস্টন বাংলা নিউজ পত্রিকায়ও এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটিতে কয়েকটি শিশু-কিশোর চরিত্রের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়েছে। এ উপন্যাসের শাওন চরিত্রটি অনেকটা ‘পথের পাঁচালী’র অপুর মতো। কিছুটা ‘রামের সুমতি’র রামের মতো। আবার কিছুটা রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পের ফটিকের মতো। উপন্যাসটি পড়তে গেলে অনেক চরিত্রের কথাই মনে পড়বে। তবে লেখক এ ব্যাপারে সচেতন থেকে পাঠককে নিজের সৃষ্ট পথ ধরে এগিয়ে নিয়ে যান।

সত্তরের দশকে রায়পুরে ডাকাতিয়া নদী আর নিসর্গে বেড়ে ওঠা শাওনের গল্প এটি। বাবা-মা ছেড়ে নানা তালুকদারের বাড়ি হিজলতলায় চলে আসা শাওন আর তার কয়েকজন মামা এবং প্রায় সমবয়সী মামাতো ভাই শিশিরের গল্প। উপন্যাসটিতে মানুষের নিজস্ব পরিবেশ ও শেকড়ের অনুসন্ধানের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিক কিন্তু শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণেই চিরদিনের মতো ছুটি নিয়ে তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। এ উপন্যাসেও দেখা যায় শাওন অসুস্থ হয়ে পড়ে, মানসিকভাবে কেমন অস্থির হয়ে পড়ে। শিশু মানসিকতার অনেক দিকই এখানে উঠে এসেছে। 

তালভিটার জঙ্গল আর সেখানকার রহস্য আকর্ষণ করে কিশোর শাওনকে। তার শিশু মানসিকতায় আদর-স্নেহ আর বাৎসল্যে বৈষম্য প্রবল পীড়া দেয়। এতেই সে পীড়িত হয়। তাই সে মাঝে মাঝে মা-বাবার সান্নিধ্যে রাজাপুকুর চলে আসে। তখন সে চলে যায় মঠবাড়ির জঙ্গলে। জঙ্গলের রহস্য তাকে প্রবলভাবে ডাকে।

শাওনকে কখনো দেখা যায় গল্পের আসরে। দেখা যায় ছড়ার আসরে। জারুল, সোনালু ফুলে ভরা গাছের নিচে। ভূত আর সাপের বিষয়েও অগাধ কৌতূহল দেখা যায় তার। সাপের মাথার মানিকের মতো রহস্যময় বস্তু ঘিরে থাকে শাওনের কিশোর মনস্তত্ত্ব। আদিগন্ত ফসলের মাঠে আলেয়া দেখার অভিজ্ঞতাও তাকে বিশিষ্ট করে তোলে। গাছপালা, বুনো পশুপাখির বৈচিত্র্য শাওনকে অন্যসব কিশোরের সঙ্গে এক অদ্ভুত সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। ধীরে ধীরে শাওনের মনের ভেতর একটি সমান্তরাল জগৎ সৃষ্টি হয়। সেখানে সে তার চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষার সব অনুষঙ্গ সুলভ মনে করে। 

আলম শাইনের উপন্যাসটি কোমল অনুভবের এক স্নেহপরায়ণ আশ্রয়। এটিতে কোনো ধরনের ঘটনার ঘনঘটা নেই। আছে রহস্য এবং রোমাঞ্চের বর্ণনা। বন, গাছপালা, বিল, খাল, নদীতে নৌকা বাওয়া, রাতের ভূতের ভয়-বিহ্বল বর্ণনা। আরো আছে গল্পের আসরে, ছড়ার আসরে মুগ্ধ শ্রোতা হিসেবে শাওনের বসে থাকার দৃশ্য। এসব দিয়েই সে নতুন এক জগতে পাঠককে নিয়ে যায়। হাকলবেরি ফিন বা টম সয়্যারের মতো রহস্য না থাকলেও নিসর্গের রহস্য নিয়ে পাঠককে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা লেখকের একটি বড় দিক। সমকালীন উপন্যাসের মধ্যে এটি ভিন্ন ধরনের। পড়তে পড়তেই পাঠক তা অনুভব করবেন। ১২৮ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads