• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বিশ্বসাহিত্যের আধুনিক কথাশিল্পী উইলিয়াম ফকনার

মার্কিন কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনার

সংরক্ষিত ছবি

সাহিত্য

বিশ্বসাহিত্যের আধুনিক কথাশিল্পী উইলিয়াম ফকনার

  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০১৮

মনোজিৎকুমার দাস

উইলিয়াম ফকনার আধুনিক ধারার নিবেদিত আমেরিকান লেখক, ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম এই মার্কিন কথাসাহিত্যিকের জন্ম ১৮৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ফকনার তার নিজের দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছয় মাসের জন্য ইউরোপ ভ্রমণ করেন। সেটা ছিল ১৯২৫ সাল। ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ১৯২৬ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘সোলজারস পে’ প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে বের হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মসকুইটোস’ এবং ১৯২৯ সালে ‘সার্টোরিজ’ নামের তৃতীয় উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে ফকনার তার বিখ্যাত উপন্যাস অ্যাবসালোম, অ্যাবসালোম! (১৯৩৬) এবং দি আনভ্যাংকুইশ্ড (১৯৩৮) রচনা করেন।

তবে তিরিশ ও চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে ফকনার চিত্রনাট্যলেখক হিসেবে হলিউড যান। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী উইলিয়াম ফকনার চিত্রনাট্যের সফল লেখক হিসেবে হলিউডের শ্রেষ্ঠ পরিচালক হামফ্রে বোগার্টের সঙ্গে কাজে করেন। জীবনের বাকি সময় তিনি অক্সফোর্ডেই গল্প ও উপন্যাস লিখে কাটিয়ে দেন। উইলিয়াম ফকনার ‘দি সাউন্ড অ্যান্ড দি ফিউরি’, ‘অ্যাজ আই লে ডাইং’ এবং ‘লাইট ইন অগাস্ট’— তিনটি ক্লাসিকধর্মী সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৪৯ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এ উপন্যাস তিনটি বিংশ শতাব্দীর মর্ডান লাইব্রেরির তালিকার একশ’ ইংরেজি ভাষার সর্বোত্তম উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত হয়। উইলিয়াম ফকনার নিজেই তার ‘দি সাউন্ড অ্যান্ড দি ফিউরি’ উপন্যাস সম্পর্কে বলেন, ‘লিখতে শুরু করি একটি মানসিক চিত্রের মাঝ দিয়ে, তখন বুঝিনি যে এটা প্রতীকী।’

উইলিয়াম ফকনার এমনই একজন কথাসাহিত্যিক যিনি নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে উপন্যাসের ঘটনা, শব্দ, বাক্যবিন্যাস নির্মাণ করেন। তিনি তার ‘দি ওয়াইল্ড পাম্পস’-এ দুটি কাহিনীকে চিন্তাচেতনা, মেধা-মনন ও ঋদ্ধতার সঙ্গে উপস্থাপন করেন। যেখানে এর পাত্রপাত্রীগুলো প্রেমের কারণে সব বিসর্জন দিয়ে এক সময় সব হারিয়ে ফেলে।

সেনাবাহিনীতে সৈনিক, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কেরানি, বাড়ি তৈরির কাজে লিপ্ত থেকেও উইলিয়াম ফকনার আমেরিকার ইংরেজি সাহিত্যে নতুন একট মাত্রা দান করতে সক্ষম হন। ফকনার মোট ১৯টি উপন্যাস এবং অসংখ্য ছোটগল্পের রচয়িতা। তার বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থও আছে।

১৯৪৯ সালের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী উইলিয়াম ফকনার ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমের সিটি হলে নোবেল প্রাইজ প্রদান বক্তব্যে সাহিত্যকর্মের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এ পুরস্কার একজন মানুষ হিসেবে আমাকে দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছে আমার কাজকে। ...আজকের দিনে তরুণ-তরুণীরা তাদের লেখায় লিখতে ভুলে গেছে মানব মনের যন্ত্রণা। দুঃখ-যন্ত্রণার করুণ কাহিনী তারা তাদের লেখায় অবলীলাক্রমে তুলে ধরতে পারেন।’ তিনি তার এই বক্তৃতায় সাহিত্যকর্মের দিকদর্শন তুলে ধরতে সচেষ্ট হন, যা বিশ্বসাহিত্যের যুগান্তকারী দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কথাশিল্পী ফকনারের স্বাস্থ্য এরপর ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে এবং বেশ কয়েকবার ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে অনেক আঘাত পান। এমনই এক আঘাতের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১৯৬২ সালের ৬ জুলাই তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন। উইলিয়াম ফকনার লোকান্তরিত হলেও তার অমর সৃষ্টি তাকে বিশ্বসাহিত্যাঙ্গনে চিরভাস্বর করে রাখবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads