• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রকৃতি ও অভিশপ্ত আঙিনা

ফুলেদের চুমু খায় প্রজাপতিরা, ফুলেরা তাদের মধু দেয়

আর্ট : রাকিব

সাহিত্য

প্রকৃতি ও অভিশপ্ত আঙিনা

  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০১৮

নাঈমা সিদ্দিকা

আমার এ আঙিনায় ঋতুবৈচিত্র্য বড্ড বেশি। কত রকম ছলনায় যে প্রকৃতি ভোলাতে চায় মানবেরে! কিন্তু আমার এ আঙিনায় প্রকৃতির ছলাকলা কেউ দেখে না। বেলী ফুলের গন্ধে কোনো আনমনা পথিক এই আঙিনায় এসে বসে না দু-দণ্ড, বকুল ফুলেরা একা-একাই সারা বাড়ি মাতানোর প্রতিযোগিতায় নামে। মৃদু হাওয়া বকুলের গন্ধ নিয়ে ফিরে ফিরে আসে; কিন্তু পুকুরপাড়ের মাচায় কিংবা পুকুরঘাটে কোনো বাউল তার গানের পসরা সাজায় না। হয় না কোনো মন উদাস-বেখেয়ালি। হাসনাহেনা ফুলগুলো বড্ড নমনীয়, লাজুক। অন্ধকার ছাড়া সে তার রূপ খোলে না। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় খলখলিয়ে হাসে। তার হাসি দেখেও আমার আঙিনায় ডায়েরির পাতা খুলে কোনো কবি ছোটায় না তার মসি। যত রাত বাড়ে পুকুরের টলটলে জলে গাছের ছায়ারা আরো নিবিড় হয়। জোনাকির প্রতিবিম্ব চাঁদের সঙ্গে একাকার হতে চায় দক্ষিণায় ঢেউ তোলা পুকুরের ছোট্ট বুকে।

কত রকম রাতজাগা পাখির আনাগোনা এই আঙিনায়। তবু কোনো বংশীবাদক তার বাঁশিতে বুঁদ হয়ে রাত পার করেনি কখনো। আমার এই আঙিনায় বৃষ্টির রূপ বড় মোহনীয়। কিন্তু কদম ফুলের গা ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া জলে ধৌত করেনি কেউ কখনো তার ক্লান্ত শরীর। বৃষ্টির ফোঁটা হাতের মুঠোয় বন্দি করে কেউ তার মন-মানসীর মনটাকে ভিজিয়ে দেয়নি, করেনি কোনো খুনসুটি। সকালের স্নিগ্ধ রোদ এসে হুটোপুটি খায় কত নাম না জানা গাছেদের ভিড়ে। আমার আঙিনায় প্রভাকর এত কোমলভাবে তার রূপের পসরা সাজায়! তবু কেন জানি আমার আঙিনায় কখনো কোনো সন্ন্যাসী ধ্যানে মগ্ন হয়নি। কত রকমের প্রজাপতি খেলা করে আমার এই ছোট্ট আঙিনায়। হলুদ, সাদা, লাল-কালো, সাদা-নীলের মিশেল, ছোট-বড়-মাঝারি কত রকমের প্রজাপতি! ঘাসফড়িং, ভ্রমরেরাও খেলা করে, ফুলের সঙ্গে তাদের প্রণয় হয়। এই আঙিনার নাম না জানা কত ফুলের সঙ্গে প্রেম হয় কত নাম না জানা প্রজাপতির! তারা জানে তারা সবাই ক্ষণিকের অতিথি। তার জন্যই হয়তো কেউ কারো পরিচয় জিজ্ঞেস করে না।

ফুলেদের চুমু খায় প্রজাপতিরা, ফুলেরা তাদের মধু দেয়। এই আঙিনা কত জীবনের রসদ জোগায়! কিন্তু এই আঙিনায় খেলা করে না কোনো শিশু, খলখলিয়ে হেসে ওঠে না কোনো মানবফুল, টলমলে পা নিয়ে প্রজাপতি, ঘাসফড়িংয়ের পেছনে দৌড়ায় না ছোট্ট কোনো ভালোবাসা।

আমার এই আঙিনা অভিশপ্ত বড়। তবু আমি এই আঙিনায় প্রাণের সঞ্চারে অপচয় করি কত সময়, কত শক্তি, কত ভালোবাসা! কত অপমান, কত ইঙ্গিতময় অবহেলা জোটে কপালে। তবু জানি না কিসের আশায়, কার প্রতীক্ষায় আমি আমার আঙিনা সাজাই! হয়তো মনের কোনো অন্তরালে অপেক্ষায় থাকি কোনো এক সময়ের- যখন সব অভিশাপ কেটে যাবে। দুটি চোখ, একটি মন এই আঙিনার প্রেমে পড়বে!

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads