• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ছোটকাগজ এবং চিন্তার সূত্র

লিটল ম্যাগাজিনের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে সাহিত্য সংকলন

সংরক্ষিত ছবি

সাহিত্য

ছোটকাগজ এবং চিন্তার সূত্র

  • মামুন রশীদ
  • প্রকাশিত ২৮ জুলাই ২০১৮

লেখক-প্রকাশকের জন্য ফেব্রুয়ারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসের দিকে তাকিয়ে থাকেন প্রকাশক। কারণ আমাদের প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িয়ে আছেন, সেসব প্রকাশকের অধিকাংশই বই প্রকাশ করেন ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে। বই যে পুরো বছরজুড়েই প্রকাশ হতে পারে, বইয়ের বিপণন হতে পারে— এ কথাটি তাদের অনেকেই আমলে নেন না। এরও কারণ আছে। সে কারণ বইয়ের বিপণন। আমাদের গড়পড়তা যেসব প্রকাশক ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করেন, তাদের বইয়ের বাজার খুব ছোট। তাদের অধিকাংশই প্রকাশনা শিল্পে কোনো বিনিয়োগ করেন না। তারা লেখকের টাকায় বই প্রকাশ করেন। তারপর মেলার এক মাস সেই লেখক— তার পরিচিতজনদের ধরে ধরে নিয়ে আসেন নির্ধারিত স্টলের সামনে। বই বিক্রি করেন, হাসিমুখে তিনি সেই বইয়ে নাম লিখে দেন, স্থিরচিত্রে বন্দি হয় সেই দৃশ্য, এরপর অন্তর্জালের সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বন্ধু-পরিচিতজনদের কাছে। এই শ্রেণির লেখকরাও অপেক্ষা করেন বইমেলার জন্য। কারণ, সারা বছর তাদের বইয়ের খোঁজ থাকে না। তাদের বই বিপণনের উদ্যোগ থাকে না, না লেখক-না প্রকাশক। ফেব্রুয়ারির পর, উভয়েই এই বইয়ের কথা ভুলে যান।  এই দৃশ্য আমাদের বইমেলার একটি পরিচিত দৃশ্য। এর বাইরে যাদের বই সারা বছর চলে, মেলায় যাদের বইয়ের খোঁজ করেন পাঠক, অপেক্ষায় থাকেন— সেসব বইয়ের প্রকাশক আলাদা। তারা শুধু মুদ্রাকরের ভূমিকাই পালন করেন না, তারা বই বিপণনও করেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বই ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। যে পুঁজি বিনিয়োগ করেন, তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কারণ ব্যবসার উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। আর সেই মুনাফা তারা লেখকের টাকায় না করে, তাদের দেওয়া পণ্য বিক্রির মাধ্যমেই করতে চেষ্টা করেন।  কিন্তু বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তারুণ্যের যে উদ্দীপনা তা চোখে পড়ার মতো হলেও তারুণ্যের চিন্তাকে ধারণ করার যে মাধ্যম লিটল ম্যাগাজিন, তারও প্রকাশনা যে ধারাবাহিকভাবে কমছে, এটা নিশ্চিত। খুব বেশি দূরের কথা নয়, আমাদের বিশ শতকের আশি এবং নব্বইয়ের দশকজুড়ে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের যে উন্মাদনা, তারুণ্যের চিন্তা-চেতনার যে স্ফুরণ, সৃজনশীল আড্ডা তা আজকের ছোটকাগজগুলো ঘিরে প্রায় অনুপস্থিত। এই সেদিনও সারা দেশ থেকে অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো, তাতে থাকত নতুন চিন্তার খোরাক, একজন রাগী তরুণের উজ্জ্বল উপস্থিতি। সারা দেশ থেকে তরুণরা একুশের বইমেলা উপলক্ষে আসতেন টাটকা কাগজের ঘ্রাণ নিতে। প্রাণের উচ্ছ্বাস মেলাতে আসতেন মেলার অসংখ্য মানুষের ভিড় আর বাতাসে। সেই অপেক্ষাতেই সারা বছরই দেশের কোথাও না কোথাও থেকে বের হওয়া ছোটকাগজগুলো মেলা থেকে উঠে আসত সংগ্রহের তালিকায়। এখন সেখানে যেন খরা। আজ ছোটকাগজের নামে সেই রাগী সম্কাদনা চোখে পড়ে না, দেখা যায় না নতুন চিন্তার উপস্থিতি। বরং লিটল ম্যাগাজিনের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে সাহিত্য সংকলন। ছোটকাগজের নামে বিভিন্ন সংকলনে থাকছে তরুণদের কবিতা, গল্প, বই আলোচনা, কবিতা-গল্প বিষয়ক গদ্য। গৎবাঁধা এই তালিকার বাইরে ভিন্ন স্বাদের লেখার উপস্থিতি আজকের ছোটকাগজে খুঁজে পাওয়া ভার। অন্যদিকে একুশের বইমেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ ছোটকাগজও যেন ফুরিয়ে যায়। আবার অপেক্ষা নতুন বছরের ফেব্রুয়ারির জন্য। কিন্তু আমাদের চিন্তা আমাদের চেতনা যেন ঢাকা না পড়ে। ছোটকাগজকেন্দ্রিক চিন্তার যে ধারা তা যেন হারিয়ে না যায়।  দূর থেকে মেলায় আসা কোনো যুবক যেন ঠিক তার চিন্তার ধারাকে খুঁজে পায় ছোট্ট, ম্যাড়মেড়ে— প্রায় ধূসর হয়ে যাওয়া কোনো ছোটকাগজের ভেতরে। যাকে সে যত্নে তুলে নিয়ে যাবে ঘরে, তার কাঁধের ঝোলায় ঢুকিয়ে, অথবা হয়তো অখ্যাত কোনো লেখকেরই ভাবনামূলক চিন্তা উসকে দেওয়া কোনো বইয়ে। সেই ভাবনারই ঢেউ এসে লাগবে আমাদের আগামীতে। চিন্তার সূত্র দিয়ে আমরা যোগ হবো নতুনের সেতুতে, আলোর দিকে।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads