বীরেন মুখার্জী
আহ্বান
সে-এক নিরেট আহ্বান! নিরবচ্ছিন্ন প্রেরণার মতো বেজে ওঠে। আহ্বান প্রাণাধিক, প্রখর চৈত্ররোদ-ও নতজানু তার কাছে, দেখেছি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পেরে হেলে পড়েছে দিগন্তে। যাকে বসন্ত নামে ডাকছ, তারই গুঞ্জনে ক্ষেতে-আলে, বনশীর্ষে, সর্বত্রই দুলছে ছলনার প্রপঞ্চ! এ মুহূর্তে হয়তো ভাবছ- সময়ের ত্বক থেকে দ্রুত খসে যাচ্ছে ঘ্রাণ ও ঔজ্জ্বল্য; বিশ্রী বাতাস লেগে পচে যাচ্ছে মগজের সতেজতা; একই সঙ্গে ৫০-কে সংখ্যা ধরতে পারছ না কিছুতেই— ধারণা করি।
বরং বসন্ত ফাঁদেই ক্রমশ ঢুকে যেতে পারে মেধা ও সংকল্প, রোদবিকিরিত দিন সাক্ষী রেখে বলতে পারি তবুও; যখন দূরে দাঁড়িয়ে, নির্ভার তুমি, অথৈ দুঃসংবাদের ভিড় সামলাতে না পেরে পুনরায় নির্মাণ করতে চাইছ ভিন্ন কৌশল। এর চেয়ে সময়ের পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে এসো, দেখো, অন্ধকার ঘেঁটে সুপ্রচুর জ্যোতি তুলে আনবে বলে পুনর্জাগরণের তীর্থে দাঁড়িয়ে আছে বৈকালিক ডেমো; স্নাতকোত্তর ইশারায় তাকে উন্মুক্ত করে দাও...
সৈয়দ শিশির
ঈর্ষা আমার
ঈর্ষায় জ্বলি...ঈর্ষায় জ্বলি
আমার আগে তিমির যখন
পরখ করে তোমায়।
ঈর্ষায় পুড়ি...ঈর্ষায় পুড়ি
আমার আগে দীপিকা যখন
তোমার চোখে তাকায়।
ঈর্ষায় কাঁদি...ঈর্ষায় কাঁদি
আমার আগে অনিল যখন
তোমার দেহ জুড়ায়।
ঈর্ষায় থামি...ঈর্ষায় থামি
আমার আগে বাদল যখন
কদম দিয়ে হাসায়।
ঈর্ষায় ভাবি...ঈর্ষায় ভাবি
আমার আগে কোন সে হূদয়
ভাবনা কিছু শেখায়?
রহমান মুজিব
অনুরাধাকে লেখা শেষ চিঠি
বৃক্ষ যিশুরা দিনেরাতে ক্রুশে চড়ে, খুন হয়
আমি জানি, পাতার পতনে বেজে ওঠা মরু একদিন লাশের গ্রাম হবে
সাঁওতাল মেয়ের কাঁধের বোঝা উনুনে পোড়াবে টোটেমের শেষ মানচিত্র
আর হারিয়ে যাবে শুদ্ধ চরণে নেমে আসা প্রকৃতির চিরহরিৎ শৈশব
পশ্চিমের স্বর্ণাভ গোধূলিঘুড়ি সন্ধ্যায় হারিয়ে গেলে
পেছন থেকে ডেকে যায় প্রেমের অন্ধ কংকাল, উপেক্ষায় সুন্দরবন দূরে রেখে
মন ছোটে রামপালমুখী, কয়লায় জমে ওঠে কদর্য পরকীয়া
অনুরাধা, দেখো কাচফাটা ক্ষুণ্ন বিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানবশিকল
এসো ঘরে ফেরার আগে ফিরিয়ে দিই বন্যদের সবুজ সংসার।
রাজীব আর্জুনি
গোলাপই সেরা
রোদগ্রস্ত দুপুরেই কি-না ঠিক মনে নেই,
মনে আছে
কেবল ক’জন মাঝি ও নৌকার কথা;
বজ্রমেঘ উপেক্ষা করে নদীর ঢেউ
নিয়ে হেলাফেলা করে পৌঁছেছিল তীরে;
তীর গিয়ে অনেকেই
পিছু হটে; পিছু হটা অনেকেই
পৌঁছে যায় সবার সম্মুখে;
রোদগ্রস্ত দুপুরেই কি-না মনে নেই,
ঘুঘু আর শালিকের তর্ক শুনে
একটি হিজল গাছে গিয়ে বসেছিল
এক পাখিবিদ; জিজ্ঞাসায় উচ্চারণে
সেও কি-না তর্কে...বলেছিল :
পৃথিবীতে মানুষই আসবে আবার
ফিরে; মানুষ বলবে
মারণাস্ত্র নয় গোলাপই সেরা
সকল সময়ে; জীবনের তরে।
আদ্যনাথ ঘোষ
সাধ ও সাধ্য
হৃদয়ের আশাগুলো জেগে ওঠে
দুরন্ত যৌবন মাঝে
দীপ্ত শিখায়—
মধুমাখা সাধগুলো
ভেঙে যায় অবিরত
না ফোটা কলির মতো
বুকের অনলে
হেমন্তের রিক্ত মাঠে।