• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সাহিত্য

অপরাধ যাপন ব্যক্তিমানসে অপরাধের স্বেচ্ছাচারিতা

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৮

সাহিত্যের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো উপন্যাস। অতীত জীবনের গল্প, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রেম-বিরহ, সামাজিক নানা উপখ্যান, প্রকৃতি-পরিবেশ, স্বাধীনতা-পরাধীনতার গল্পসহ কত কিছুই না লেখকের জবানিতে উপন্যাসের ধারায় উঠে আসে। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের পটভূমিকে কেন্দ্র করে এই প্রজন্মের তরুণ লেখক প্রিন্স আশরাফ তার রচিত ‘অপরাধ যাপন’ উপন্যাসে একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা ও কবির সমগ্র জীবনের অপরাধ যাপনের ঘটনাবহুল কাহিনী সার্থকভাবে তুলে ধরেছেন। কাকতালীয়ভাবে লেখক একজন নেতাকে তার মনে আবিষ্কার করে নেয়। আর তারপরই দেশীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের আবহে তুলে ধরেন সেই নেতার দেশবিরোধী অপরাধময় জীবনের সকল অধ্যায়। এটি একটি থ্রিলারধর্মী উপন্যাস।

‘অপরাধ যাপন’ উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত। এ-সময় একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে পড়ে অচেনা এক চরিত্রের সম্মুখীন হয়ে কোমা অবস্থায় চলে যান। তারপর থেকে তিনি হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে থাকেন।

তিনি সেখানে শুয়ে শুয়ে উপলব্ধি করতে পারেন, জীবনে কতই না অপরাধ করেছেন। সেই অতীতের অপরাধের দিনগুলো তাকে বিষণ্ন করে তোলে। যতটা না অসুস্থতা তাকে গ্রাস করে, তার থেকেও বেশি গ্রাস করে অপরাধী জীবনের সেই স্মৃতিগুলো। একজন নেতা হয়ে যে অপরাধ তিনি করেন তা যেন ক্ষমারযোগ্য নয়— এ ভাবনায় বিমূর্ত সেই রাজনীতিক।

রাজনৈতিক ব্যক্তির অপরাধ জীবনের চিন্তাধারার প্রবাহে বেরিয়ে আসে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করার মানসিকতা, মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্ষমতা থাকতেও দেশ পাড়ি দিয়ে কবিতা লিখে সময় কাটানো এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পিতাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানো, অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ টাকার মানুষ হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো বিভিন্ন অনুচ্ছেদের বর্ণনায় ধরা পড়ে। উপন্যাসিক তার ব্যক্তি স্বাধীনতার মাধ্যমে অন্যান্য উপন্যাসের মতো এখানেও কিছুটা গোয়েন্দা কাহিনীর আদলে গল্পগুলো রচনা করেছেন এবং পর্যায়ক্রমে রাজনীতির মূল সূত্র উন্মোচনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

তৎকালীন সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী অনেক অপশক্তিই ছিল, যারা রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে দেশমাতৃকার জন্য কিছু করেননি। বরং নানা অপরাধ করে গেছেন।

নিজের জীবনকাল ফুরিয়ে আসার মুহূর্তে যদি সেসব অপরাধকর্ম ভেসে আসে এবং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত যদি চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়, তাহলে হাসপাতালে অপরাধ যাপনের মুহূর্তগুলো কেমন হতে পারে তা এই থ্রিলার উপন্যাসের প্রাসঙ্গিক বিষয়। উপন্যাসটি পাঠকের খোরাক হবে তা নির্বিঘ্নে বলা যায়। ৎ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads