• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
উচ্চতর গার্হস্থ্য জীবন

ছবি : সংগৃহীত

সাহিত্য

উচ্চতর গার্হস্থ্য জীবন

  • প্রকাশিত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

সকাল থেকে ঝুপঝুপ বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়া। নরসুন্দা নদীর জলের ফোঁসফোঁসানি শোনা যাচ্ছে। ঢেউগুলো মত্ত নাচানাচিতে। উঠোনের লাউ, কুমড়োর লতাগুলো প্রাণপণ মাচা আঁকড়ে ঝুলে আছে, ছোট পুঁইয়ের চারাগুলো কাত হয়ে পড়েছে। নিরুপমা হায় হায় করে উঠলেন। এ বেলা মন্দিরে যাবেন, নইলে উঠোনে পা রাখতেন। লাউ-কুমড়ো আর পুঁইয়ের যত্ন নিতেন।

একটা সুতির শাড়ি পরে মাথার দীর্ঘ চুলে খোঁপা করেন ব্যস্ত হাতে। খাটের ওপর শুয়ে পা নাচাতে নাচাতে সোমেশ একবার আড়চোখে দেখে বিড়বিড় করে— চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা...! নিরুপমা শুনলেন, কিন্তু ফিরে চাইলেন না। শাড়ির পাড় টেনেটুনে... মাথায় আঁচল তুলে দিয়ে দেখেন, সোমেশ মুখ ভার করে বই পড়ছে। সোমেশ চোখ না তুলে বললেন, ও নিরু, এ-বেলা গিয়ে কাজ নেই। নিরুপমা মুখ ঝামটা দিয়ে বলেন, বুড়োর যত সুখ ঘর আর বিছানায়...। সোমেশ মিটমিট করে হাসল। এ হাসি নিয়েও নিরুপমা বহুবার টিপ্পনী কেটেছে— বুড়োদের হাসি কত বিচ্ছিরি তা যদি ওরা দেখতে পেত!

বাইরে পা রাখতেই বৃষ্টির জলে নিরুপমার স্যান্ডেল-শাড়িতে মাখামাখি। রি রি করে ওঠে সোমেশ— আগেই বলেছিলাম, এ-বেলা বেরিয়ো না। জীবনে যদি একটা কথা শোনাতে পারতাম। নিরুপমা ঠোঁটে আঙুল চেপে বলল, চুপ! ...সারা দিন শুধু এই কোরো না, ওই কোরো না... এটা খেয়ো না, ওটা খাও... যত নিয়ম আমার বেলা, যত্তসব!

অটোতে উঠে নিরুপমা কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে ফিসফিস করে— সরে বসো, মানুষজন চোখে পড়ে না? তারপর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মনে মনে বলেন, বুড়ো এত রঙ কোথায় পায়! সোমেশ সরে বসল। বাচ্চাদের মতো নাক ফুলিয়ে অভিমান করল। বয়সকালে বুকে জড়িয়ে আদর দিয়ে শান্ত করে ফেলতেন নিরুপমা। কিন্তু এই বয়সে... এ্যাঁ মা ছিঃ... এই বুড়ো তো দেখছি জ্বালিয়ে মারল, আ ভগবান!— আঁচল টেনে মুখের হাসি আড়াল করেন নিরুপমা।

কয়লাঘাট মন্দিরে পুজো দিতে এসে একটুর জন্য বিপদে পড়তে যাচ্ছিল নিরুপমা। ভাগ্যিস, আগেভাগে সোমেশের মুখ চেপে ধরেছিল, ঠাকুরের কানে কথাটা গেলে নির্ঘাত একটা ভজগট বেঁধে যেত। বুড়োর কত বড় সাহস বলে কি না— পুজো-টুজোতে ভগবান ভোলে না, নিরু! নিরুপমার বুক ছ্যাঁত করে ওঠে— ঠাকুর, বুড়োর একটু সুমতি দাও। নিরুপমা দুই হাত কপালে শক্ত করে ঠেকিয়ে রাখলেন।

পুজো দিয়ে ফেরার পথে দুজনের বেশ কথা কাটাকাটি হলো। সোমেশ হেসে গড়িয়ে পড়ছে নিরুপমার গায়ে, নিরুপমা চেপেচুপে বসছে বার বার। আর মনে মনে আওড়াচ্ছেন— মা, মাগো, সোমেশের কথায় কিছু মনে কোরো না। ও বড্ড ছেলেমানুষ! বাড়ি ফিরে বিছানায় শরীর ছেড়ে দিলেন নিরুপমা। খানিক বাদে ডোর বেল বাজল। এ অসময়ে কে? বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে চমকে ওঠেন, তোরা! ছেলেমেয়ে একসঙ্গে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে। নাতি-নাতনিরাও হই-হল্লায় পুরো ঘর ভরে তুলল। এ ফাঁকে মেয়ে বলল, তোমাকে ফোন করেছিলাম মা...

নিরুপমা বলল, ও... তোর বাবাকে নিয়ে পুজো দিতে... আহ মরণ! থেমে গেলেন নিরুপমা, দেখেন সামনের দেয়াল থেকে ফুলের মালা বুকে ঝুলিয়ে চেয়ে আছেন সোমেশ! নিরুপমা স্পষ্ট শুনতে পেলেন সোমেশ হো হো করে হাসছে আর বলছে, ও নিরু, কেমন জব্দ করলাম, বলেছিলাম না— মরে গিয়েও তোমাকে জ্বালাবো।

 

মাসুম বিল্লাহ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads