বিভাস রায়চৌধুরী
চরাচর
কষ্ট হওয়ারই কথা
কষ্ট পাচ্ছিও খুব
কিন্তু আমি স্বীকার করব না, তুমি একা পারো
শীতে কেঁপে কেঁপে উঠছি
চুম্বনে শুকনো পাতায় আগুন লাগে দ্রুত
কিন্তু আমি স্বীকার করবই না,
তেমন একটা উনুনের গল্প তুমি জানো
ধুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা মানুষের ঈশ্বর
একবার আমাকে বলছেন, ‘ঝাঁপাও’
আর তক্ষুনি তোমাকে বলছেন, ‘পালাও’
মাঝখানে একটা পথ নিরন্তর শুয়ে আছে দেখি
কষ্ট হওয়ারই কথা
কষ্ট পাচ্ছিও খুব
কিন্তু আমি স্বীকার করবই না আত্মার ওপারে চাঁদ উঠলে
তোমার কথা আমি ভাবি
শিউলী জাহান
অনাঘ্রাতা কাবেরী
শীত-রাত্রি ছুঁয়ে
নামে বৃষ্টির কোলাহল
বৃষ্টিসূত্র মানুষের মতো তন্ত্র-মন্ত্র বোঝে না
আকাশ ডাকলো তো নেমে এলো সিন্ডারেলার কুন্তলের মতো,
বরফগলা জল ধেয়ে চলে সমুদ্র মন্থনে—
আমার নিগূঢ় বন্দনায়ও তুমি অনাঘ্রাতা কাবেরী
নৈরাশ্যচারী আমি তোমার কবোষ্ণ বুকে বুনি একাকিত্বের বিনুনি
আহা...তুমি যদি হতে আমার সিন্ডারেলা,
তোমার পদতলে আমার গোলাপ ছোঁয়াতেই
ঝরে পড়তে বৃষ্টির সিম্ফোনি হয়ে
আমার জমাট সরোবরে,
এই কৃষ্ণ-রাতে, এই হিম-রাতে।
চাণক্য বাড়ৈ
তন্ত্রশাস্ত্র ঘেঁটে
উত্তর গোলার্ধ ছুঁয়ে উড়ে আসে কুয়াশা-কুণ্ডলী— পৃথিবীর প্রত্ন-প্রান্তরে নামে উষ্ণ
শীতরাত— অবদমন-বনে ঘুমিয়ে ছিল যে আগুন-বাসনা, ঘর্ষণে ঘর্ষণে উসকে উঠবে
বলে সে খোঁজে বিপরীত কাঠ...
পাথর যুগের বিকিরিত আভায় যারা নিয়েছিল বিবিধ পুরাণের পাঠ— সভ্যতার উদ্ভিন্ন
কসরত নিয়ে তারাই শোনাল শেষে প্রাগৈতিহাসিক ধ্যানের আখ্যান...
সমিধ নীরবে গায় ‘শরীর এক সুসুপ্ত চিতা’— অন্ধের উপাধি পেয়ে ডুমুরের ডালে নাচে
তান্ত্রিক পেঁচা— আর ভেল্কির থলে ছিঁড়ে বেরোল যে বেঢপ বেড়াল আমিষের থালা নিয়ে
তাকে ডাকে কামাখ্যা-বালিকা...
গোলাম কিবরিয়া পিনু
শীতকালে কালিজিরা ফুল
শীতকালে ফোটে
কালিজিরা ফুল
নেই তো ভেষজগুণ!
যমুনাগর্ভ থেকে বের হয়ে
কাকে করি খুন?
কালোজাম কালোটাকা
ও কালোবাজার!
ঘিরে ধরে আছে
আরও কালো পাহাড়!
রাজস্ব আদায় করেছে
যে কালেক্টর
সে তো পালিয়ে গিয়েছে
দূরের বিভুঁইয়ে!
আমরা রয়েছি যত ফুল
কুয়াশায় নুয়ে!
আবুবকর সিদ্দিক
শীত
পাঁচটা জোয়ান জবুথবু সড়কে
ঠান্ডায় ঘোরে।
চাঁদ ব্যাটার তিরিক্ষি রঙ্গ
মাথার জমাট চুলে ঢলানি খায়।
নেড়িটা খোঁয়ারিমগ্ন
পাঁচটা জোয়ান বসে ক’ষে গুলতানি মারে
বলে : শীত একটা বেহদ্দ বদ বুঢ্্ঢা
রাতের দেয়াল জুড়ে এঁকে রাখে
ধূসর দাড়ি।
দেবতা ফাল্গুন এসে জরিমানা দেয়
মারীগুটিকার প্রজননে।