• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সাহিত্য

বন্ধুর জন্মদিনে শুভেচ্ছা

  • আবুবকর সিদ্দিক
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশের সাহিত্যে হাসান আজিজুল হক আজ একটি বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। বিস্ময়কর বলছি এ কারণে যে, তিনি যখন সেই শেষ পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে লেখালেখিতে এলেন, তখনো তৎকালীন বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে তথা গদ্যভাষায় তাঁর মতো ঋজু, স্মার্ট, শিল্পোত্তীর্ণ ভাষাশৈলী পাঠক দেখেনি। এটি সম্ভব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গীয় গদ্যভাষার ছাঁচটি তিনি সঙ্গী করে দেশভাগের ক্ষত নিয়ে এপারে চলে এলেন বলে। হাসানের সঙ্গে আমার পরিচয় যা পরবর্তী সময়ে বন্ধুত্বে রূপ নেয়, তা বহুদিনের— সাল-তারিখের মাপকাঠিতে বিচার করলে সে প্রায় পাঁচ দশকের বন্ধন। ষাটের দশকে পশ্চিম পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দমন, পীড়ন, শোষণের বিরুদ্ধে সামাজিক-সাংস্কৃতিক যে আন্দোলন আমরা গড়ে তুলেছিলাম সে-সময়ের ছোট মফস্বল জেলা শহর খুলনায়— সেখানেই হাসান ও আমি গল্প আর কাব্যে পরস্পরকে আলিঙ্গন করি।

ওই সময় খুলনা শহর থেকে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম খালেদ রশীদ গুরুর নেতৃত্বে ‘সন্দীপন’ গোষ্ঠীর মাধ্যমে, সেখানে নেতৃস্থানীয়দের একজন ছিলেন হাসান আজিজুল হক। সেই উত্তাল দিনগুলোতে আমার লেখা গণসঙ্গীত রাজনীতি-সচেতন লেখকগোষ্ঠীকে উজ্জীবিত করে তোলে। এ-সময় আমার লেখা ‘বেয়নেট ব্যারিকেড বেড়াজাল’ গণসঙ্গীতটি আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাজানো হতো। এসবের নীরব সাক্ষী ছিল আমার বন্ধু হাসান আজিজুল হক। আর ঠিক ওই সমসাময়িক সময়ে হাসানের লেখা ছোটগল্প ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ পাঠককে চমকিত করে। আর আমরা বিস্মিত হই তার ‘শকুন’ গল্প পড়ে। আমাদের ছোটগল্পের আঙিনায় বাংলা ভাষার অদ্বিতীয় লেখক হাসান আজিজুল হক। আগেই বলেছি, পশ্চিমবঙ্গীয় গদ্যভাষার কালোত্তীর্ণ রূপরেখাটি এদেশীয় সংস্কৃতি, আচার-রীতিনীতি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি এমনভাবে সন্নিবেশ ঘটান যা চিরকালের অথচ হাসানের নিজস্বতাকে সংজ্ঞায়িত করে। হাসান আজিজুল হক ১৯৭৩-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। এর দুই বছর পর ১৯৭৫-এ আমি সেখানে যোগ দিই। রাজশাহীর মতিহারে আমাদের সখ্য আরো নিবিড়তা পায়। এ-সময় আমাদের ব্যক্তি-সম্পর্ক পারিবারিক রূপলাভ করে। এদেশের সাহিত্যের ক্ষেত্র প্রস্তুতিতে আমাদের যুগপৎ নিরলস প্রচেষ্টা আজ একটি ভিত্তিভূমির ওপর দাঁড়িয়েছে, যার সার্থক রূপকার সে-সময়ের একঝাঁক তরুণ লেখকগোষ্ঠী। হাসান আর আমি তাদেরই অংশ। আমাদের বন্ধুত্ব তারই উজ্জ্বল স্বাক্ষর। বন্ধুর আশিতে আমিও গর্বিত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চির আধুনিক পুরুষ রবীন্দ্রনাথকে আমার বন্ধু ছুঁতে পেরেছেন- এই বা কম কিসে! বন্ধু, শতায়ুতেও আপনার কলম সচল থাক- এই প্রত্যাশা। রইল জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ৎ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads