• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মানুষের জীবন, নারীর নয়

ছবি : সংগৃহীত

সাহিত্য

মানুষের জীবন, নারীর নয়

  • প্রকাশিত ০৯ মার্চ ২০১৯

‘মেয়েরাও মানুষ’। শুনেছেন কখনো এমন বাক্য? আমি শুনেছি বহুবার। মানে যার গর্ভে জন্ম নিয়ে একজন পুরুষ ভূমিষ্ঠ হওয়ামাত্রই মানবজীবন পায়, তাদের কাছেই জীবনের কোনো না কোনো সময় সেই নারীকেই আকুতি জানাতে হয়, ‘আমাকে তোমরা মূল্যায়ন কর; আমিও একজন মানুষ!’

কেননা মানুষের আকৃতি নিয়ে জন্ম নিলেই কেউ মানুষ হয় না। লাগে মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্ব কোথা থেকে তৈরি হয়? তার যাপিত জীবন থেকে। শিক্ষা থেকে। ‘শিক্ষা’। শিক্ষা তো পরিবার বা প্রকৃতি থেকেও নেওয়া যায়। এবং সেটাই বোধকরি মানুষের মনুষ্যত্ব গঠনের প্রথম ধাপ। তবে এও শুনেছি, মানুষের জীবন ধারণের জন্য না-কি ন্যূনতম পাঁচটি চাহিদা রয়েছে- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।

জীবনের সঙ্গে, জীবন যাপনের সঙ্গে জড়িত পাঁচটি শব্দ। ‘শব্দ’ বলছি। কারণ ক’জন মানুষ যাপিত জীবনে এই শব্দের প্রয়োগ করতে পারেন? আর নারী! প্রথমত তারা জানলেও মানতে পারেন না। কেননা তাদের জীবনটা তাদের নয়। অন্য কারো জিম্মায় তার প্রাণটা ধুকধুক করে বাঁচে। কি হাসছেন? ভাবছেন, এই ২০১৯ সালে নারী যখন ঘরের বাইরে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন, তখন কেন এসব বলছি। হ্যাঁ, নারী এখন তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার। তবে?

আসমা। বিবাহিত জীবন ছয় মাসের। তার মধ্যেই সংসারে শুরু হয়েছে নানান অশান্তি। স্বামী নেশাগ্রস্ত অথবা পরনারীতে আসক্ত। আসমা কোনো ধরনের প্রতিকার বা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করার আগেই এক রাতে তাকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে বের করে দিল। এখন? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে? সব ক্ষেত্রেই যে তার আগের বাসস্থান মানে পৈতৃক বাড়িতে স্থান হয়, এমনটা কিন্তু নয়। কারণ সেখানে তার সহোদর ভাই হয়তো তাকে তার সম্পত্তির হিস্যা দিতে অস্বীকার করে। অথবা তার আদৌ কোনো পারিবারিক সম্পদ নেই। আর বাংলাদেশের হিন্দু আইনে তো মেয়েরা সব সম্পদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত! তখন তার কি করা উচিত? মামলা? আইনের সাহায্য চাওয়া? অথবা নিজে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করা? কিন্তু তার জন্য দরকার শিক্ষা অথবা অর্থের জোগান। তাহলে?

কিশোরী কন্যা শীলা। পড়ালেখায় স্কুলের সেরা ছাত্রী। কিন্তু পারিবারিক শোষণ এবং শাসনে মাধ্যমিক শেষ করার আগেই হাত বদল হতে হয় তাকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিন্তু তার শেষ! ওই বয়সেই বিয়ে করে শারীরিক জটিলতা এবং সুচিকিৎসার অভাবে মৃত সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে হারায় শ্বশুরবাড়িতে থাকার অধিকার। বুঝলেন তো, চিকিৎসা বিষয়টা আসলে সর্বজনীন নয়!
বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ছাড়াও মানুষ বাঁচে। তাই তো?
ভাত-কাপড়ে। হ্যাঁ, যা কি-না সাধু বাংলায় অন্ন এবং বস্ত্র।

ভাত-কাপড়েই বেশিরভাগ বাঙালি নারী তার জীবন পার করে দেয়। কখনো পরিবারভিত্তিক চুক্তি হয়, মানে তাকে পরিবারের সদস্য হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করা হয়। অথবা কখনো গৃহকর্মী হিসেবে। আর যেসব নারী কোনো চুক্তিতে আসতে পারেন না, তাদের ঠাঁই সোজা রাস্তায়; তথাকথিত শিক্ষায় মোড়া আমরা দিনের আলোয় যাদের ঘৃণা করতে দ্বিধা করি না। কারণ?

ফেস্টুন, ব্যানার, স্লোগানময় যে নারী দিবস, যেখানে মিডিয়া খবরের ঝড় তোলে, সেখানে দেখেছেন সুবিধাবঞ্চিত ছেঁড়া কাপড়, শুকনো মুখের কোনো নারীকে হাঁটতে? তবে এই নারী দিবস কাদের জন্য? ভাবতে শিখি।

 

শ্রাবণী প্রামানিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads