• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

সাহিত্য

রাত্রি শেষের নির্জনতা

  • কাজী সুলতানুল আরেফিন
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০১৯

সময়ের ভালো কিংবা মন্দ দিক নয়। সময় তো কেবল গল্প বয়ে বেড়ায়। জীবনের প্রভাতে জেগে ওঠা মনও কি জানতে পারে শেষ বিকেলের মন তার কী চায়! যে গল্প একাকী দুপুরের রোদ্দুর পেরোয়, বিকেলের হলদে-নীল ছায়ায় বেরিয়ে পড়ে অজানায়, আর রাত্রি শেষের নির্জনতায় খুঁজে ফেরে জীবনের মানে— সেই সব গল্পেরা আসর জমায় জীবনের আস্তানায়।

তিন বছর আগে জিয়ানার বাবা পাভেল রহমান বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে বিলকিস বানুকে উদ্ধার করেছিলেন। পরিবারের সবাইকে হারানোর পরে বিলকিস বানুর আশ্রয়ের আর কোনো জায়গাই রইল না। এমনকি কাছের কোনো আত্মীয়কেও খুঁজে পাওয়া যায়নি তখন। সর্বহারা বিলকিস বানু সেই থেকে ছোট্ট জিয়ানার গল্পের মানুষ। সময়ে-অসময়ে জিয়ানা গল্পের বায়না ধরে তার কাছে। আর বিলকিস বানু বলে যায় গল্প, সেই গল্প জল-জোছনা-জোনাকির গল্প। রাত্রি শেষের নির্জনতার গল্প...! বিষণ্ন আকাশে যখন বারিষ ঝরে পোড়ামাটির ভেজা গন্ধে তখন হূদয় উদ্বেলিত হয়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তবুও কি সাধ্য আছে তার এই মাটিকে পুড়তে না দেওয়ার? পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হওয়ার জন্যই যেন পৃথিবীতে এত মায়া। এত মায়া তবে কেন এত পোড়ায়? সূচিতার হাতের আঙুলের সঙ্গে মেঘদূতের আঙুলের নিবিড় আলাপন। মেঘদূতের কাঁধের ওপর সূচিতার হেলানো মাথা। হেমন্তের শেষ বিকেলে শীতলাসিক্ত পেলব নরম ঘাসের ওপর পা ছড়িয়ে নদীর ওপারে লালিমা সাজানো পশ্চিম আকাশের দিকে মুখ করে বসে আছে তারা। দল বেঁধে পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া। নদীর ওপারের ওই দূর সোনালি ধানক্ষেতের আল ধরে রাখাল বালকের গরু নিয়ে ফেরা।  ফেরার জন্যই যেন এই জীবন!

মেঘদূত বলে, আমরা কি চেয়েছিলাম কখনো এই মাটি পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হোক? কষ্টের আঁচড়ে হূদয়জমিন ক্ষত হোক এটি কে-ই বা চায় বলো। এই পোড়ামাটি সে তো এই দগ্ধ হূদয়ের জমিন। এই সবুজ ভূমি, কাকচক্ষু জল, নীলে-লালে মাখামাখি আকাশ, এ সবই তো সাক্ষী রইল আমাদের ভালোবাসার। তবু এখান থেকে আমাদেরকেও ফিরতে হবে। ভিন্ন পথে ভিন্ন বাঁকে আমাদের ফেরা হবে ভিন্ন গন্তব্যে।

এই ফেরাই শেষ ফেরা নয়— সূচিতা বলে। ফেরা তো তখন হবে, যখন আজকের এই দিনটির মতো জীবনের কোনো এক গোধূলি বেলায় আমরা ফিরে আসব আমাদের জীবনের মোহনায়। আমি সেই ফেরার অপেক্ষায় থাকব। তোমার অপেক্ষায়।

মেঘদূত বলে, আমিও থাকব। তোমারই অপেক্ষায়।

মেঘদূতের বুকের আরো কাছাকাছি সরে আসে সূচিতা। চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাকে পেয়েছিলাম স্বপ্নের আঙিনায়। অতঃপর কঠিন বাস্তবতায়। আর পেয়েছি বলেই জেনেছি, তোমাকে পাওয়ার আরো ঢের বাকি আছে আমার। এ এক প্রবল তৃষ্ণা! যাকে পাওয়ার পরেও আরো বেশি করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগায় মনে। কখনো যেন এই আকাঙ্ক্ষা অবসান হওয়ার নয়।

সূচিতার দীর্ঘশ্বাসকে মুঠিতে ভরে নিয়ে ভালোবাসার টিকা আঁকে মেঘদূত। বলে, কখনো নিরাশাকে ঠাঁই দিও না মনে। ভরসা করে দেখ, তোমার আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার জন্য আমি আছি। সব সময়। থাকব তোমার পাশে। তুমিই তো মাঝে মাঝে আমাকে অমিত বলে ডাকো। আর তুমি আমার লাবণ্য। তুমিই আমাকে রবিঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র সঙ্গে পরিচয় করিয়েছ। প্রতিদিনের ঘড়ায় তোলা জল, আর দিঘির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, আমরা দুজনেই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। আমরা পরস্পর পরস্পরের দিঘি আর মুক্ত আকাশ হয়ে থাকব।  লেখিকা মেহেরুন নেছা রুমার ‘রাত্রি শেষের নির্জনতা’ জীবনযুদ্ধের গল্প। যে গল্প জয় করে এগিয়ে চলে মানবজীবন। বিলকিস বানু আর সূচিতা একাকার হয়ে গেছে তাই জল-জোছনা-জোনাকির ভাটিবাংলায়। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads