• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সাহিত্য

আমাদের সাহিত্য বাংলা সাহিত্য

  • আজহার মাহমুদ
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০১৯

সাহিত্য বলতে আমরা কোনো লিখিত বিষয়বস্তুকে বুঝি। সাহিত্য শিল্পের একটি অংশ বলে বিবেচিত। আরো সুন্দর করে বলা যায়, যে লেখনীতে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তার আঁচ পাওয়া যায়, কিংবা যা সাধারণ লেখনী থেকে আলাদা। মোটকথা ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা-চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য। ধরন অনুযায়ী সাহিত্যকে কল্পকাহিনি বা বাস্তব কাহিনি কিংবা পদ্য, গদ্য- এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। পদ্যের মধ্যে ছড়া, কবিতা ইত্যাদি; গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ ছাড়া অনেকে নাটককে আলাদা প্রধান শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। নাটকের মধ্যে নাটিকা, মঞ্চনাটক ইত্যাদিকেও ভুক্ত করা হয়।

এসব বিষয় বাংলায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় বাংলা সাহিত্য। অর্থাৎ বাংলা ভাষায় রচিত যেসব সাহিত্যকর্ম রয়েছে, তাকে এক কথায় বাংলা সাহিত্য বলা যায়। আনুমানিক খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার সূত্রপাত হয়। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা-সংকলন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরো তিনটি গ্রন্থের সঙ্গে চর্যাগানগুলো নিয়ে সম্পাদিত গ্রন্থের নাম দেন ‘হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা’। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যপ্রধান। হিন্দুধর্ম, ইসলাম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাসগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এ সময়কার বাংলা সাহিত্য। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, শাক্তপদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী, রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের বঙ্গানুবাদ, পীরসাহিত্য, নাথসাহিত্য, বাউল পদাবলি এবং ইসলামী ধর্মসাহিত্য ছিল এই সাহিত্যের মূল বিষয়। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয় খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এ সময় থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তুর বদলে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাংলা সাহিত্যও দুটি ধারায় বিভক্ত হয় : কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য এবং ঢাকাকেন্দ্রিক পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সাহিত্য। বর্তমানে বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি অন্যতম, সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। সাহিত্যের যুগ বিভাজন করতে গেলে পাওয়া যায় আদিযুগ বা প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, ত্রয়োদশ শতাব্দী (যাকে বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’ বলা হয়) ও আধুনিক যুগ।

বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন সময়ের বিশেষায়িত সাহিত্যধারা রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য, বৈষ্ণব পদাবলি, মঙ্গলকাব্য, রাজসভার সাহিত্য, শিবায়ন কাব্য, শাক্তপদাবলি, নাথসাহিত্য, বাউল সাহিত্য, বাংলা লোকসাহিত্য। বাংলা গদ্যের উন্মেষপর্ব শুরু হয়েছে রবীন্দ্রসাহিত্যের ভেতর দিয়ে। এ সময় আধুনিক বাংলা কবিতা, বাংলা কথাসাহিত্য, বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের নবধারা সূচিত হয়।

পরিশেষে বলা যেতে পারে, বাংলা সাহিত্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত এবং বিশাল। যার ভেতরে প্রবেশ করলে বোঝা যাবে এর শেষ কতদূর। তাই সাহিত্য বিষয়টিকে ছোট করে না দেখে এর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রেখে এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নেওয়াই আমাদের বর্তমান সাহিত্যসাধকদের কাজ হবে। বাংলা সাহিত্যের জয় হোক। সবার মুক্তচিন্তার ভেতর দিয়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ ঘটুক। ৎ

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads