• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
চলচ্চিত্র পরিচালক রবীন্দ্রনাথ

ছবি : সংগৃহীত

সাহিত্য

চলচ্চিত্র পরিচালক রবীন্দ্রনাথ

  • মো. জোবায়ের আলী জুয়েল
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০১৯

রবীন্দ্রনাথের মূল ও প্রাথমিক পরিচয় কবি হিসেবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য তাঁর উপন্যাস, গল্প, নাটক, সঙ্গীত, চিত্রকলা, শিক্ষা, দর্শন প্রভৃতির দানে হয়েছে সমৃদ্ধ। উপমহাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প তাঁর কলমে সমৃদ্ধ হয়েছে। তাঁর কাহিনী, গান ও সুর ব্যবহূত হয়েছে চলচ্চিত্রের নির্বাক ও সবাক যুগে।

১৯৩০ সালের ২৬ জুলাই রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে প্রথম বাংলা নির্বাক চলচ্চিত্র ‘দালিয়া’ মুক্তি পায় এবং ১৯৩২-এ মুক্তি পায় তাঁরই কাহিনী অবলম্বনে বাংলা প্রথম সবাক চলচ্চিত্র চিরকুমার সভা। রবীন্দ্রনাথ কি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন? এমন প্রশ্ন অনেক গবেষকের। সাম্প্রাতিক সময়ে গবেষণায় জানা গেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনে একটি মাত্র চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, সেটি ছিল ‘নটীর পূজা’। মূলত এটি তাঁরই লেখা নাটক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছায়াছবিতে অভিনয়ও করেছেন। রবির নাটক ‘তপতী’ ব্রিটিশ ডমিনিয়ন ফিল্মস লিমিটেড ১৯২৯ সালের চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছিল। এই ছবির শুটিং হয় বীরভূমের বোলপুরে শান্তিনিকেতনে। কবি এতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন। ৮ রিলের ছায়াছবির হাত ধরেই রুপালি পর্দায় কবির প্রথম আবির্ভাব।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় ৭০ বছর বয়সে পরিচালনা করলেন চলচ্চিত্র নটীর পূজা। চলমান ছবিই কথা বলবে, এ বিষয়টি আকৃষ্ট করল রবীন্দ্রনাথকে। চলচ্চিত্র যখন বিকশিত হচ্ছে, ঠিক সে-সময়ই ছবি পরিচালনা করতে এলেন রবি ঠাকুর। এর আগে শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীরাই অভিনয় করেছিলেন এই নটীর পূজা নৃত্যনাট্যে। সেকালের নামকরা চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর কন্যা গৌরীবসু সে নৃত্যানাট্যে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। সে-সময় রক্ষণশীল ভদ্রসমাজের মেয়েরা প্রকাশ্যে নাচের মঞ্চে আসতো না। রক্ষণশীল সমাজে এই নৃত্যানাট্যটি মঞ্চস্থ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ শুধু মেয়েদের দিয়েই অভিনয় করিয়ে ছিলেন। এই নাটকটি বহুবার মঞ্চস্থ হয়েছে চিত্ররূপ দেওয়ার আগে। স্টেজে মঞ্চায়ন করার সময়ে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ‘উপালী’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তৎকালীন বিশ্বভারতীর সাহায্যার্থে (১৯২১ সালের ২২ ডিসেম্বর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়) বেশ কয়েকবার মঞ্চস্থ হয়েছিল এ নাটকটি। নটীর পূজা সে-সময়ের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে কিছুটা পরিবর্তন করে শিক্ষিত মেয়েদের প্রকাশ্য রঙ্গালয়ে অবতীর্ণ হওয়ার পথকে সুগম করেছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এই অনুকূল বাতাবরণ সৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পথিকৃতের ভূমিকায়।

নটীর পূজা’র শুটিং শুরু হয় নিউ থিয়েটার্সের স্টুডিওর ১ নম্বর ফ্লোরে। এর আগে গোলাঘর তৈরি করা হয়। রবীন্দ্রনাথ শুটিংয়ের ফাঁকে এই খড়ের চালের গোলাঘরে বিশ্রাম নিতেন। এটি ছিল সে-সময়কার নিউ থিয়েটার্সের রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য বিখ্যাত গোলাঘর। কবি এই অভিজ্ঞতা ও স্টুডিওর মনোরম পরিবেশ দেখে বলেছিলেন, ‘এটা আমার দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন।’ নিউ থিয়েটার্সের ১ নম্বর ফ্লোরে চলচ্চিত্র পরিচালনা করছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, এই খবর রটে গেল সর্বত্র। অগণিত দর্শনার্থী এসে হাজির হলো সেখানে। নিউ থিয়েটার্সের ২৫ সদস্যের দলটি ৫ দিন একনাগাড়ে শুটিং করে ছবিটি শেষ করলো। নটীর পূজা’র মঞ্চায়ন মুভি ক্যামেরায় ধারণ করা হলো। ক্যামেরাম্যান ছিলেন নিতেন বসু, সঙ্গী হলেন ইউসুফ মুলাজী। আর সম্পাদনায় ছিলেন সুবোধ মিত্র।

১৯৩১ সালের শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথ নটীর পূজা’র শুটিং শুরু করেন। আর এটি সেন্সর সার্টিফিকেট লাভ করে ১৯৩২ সালের ১৪ মার্চ। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ হাজার ৫৭৭ ফুট। নটীর পূজা ১৯৩২ সালের ২২ মার্চ কলকাতার ‘চিত্রা’ সিনেমা হলে মুক্তি লাভ করে। নটীর পূজা’য় অভিনয় করেছিলেন শান্তিনিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— ললিতা সেন (শ্রীমতি), সুমিতা চক্রবর্তী (লোকেশ্বরী), লীলা মজুমদার প্রমুখ। ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর আর শব্দ গ্রহণ করেন মুকুল বসু। তবে চলচ্চিত্রের কলাকৌশল ও রীতিনীতি কতটা অনুসৃত হয়েছিল সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ সালে নিউ থিয়েটার্সে আগুন লেগে গেলে অন্য অনেক ছবির প্রিন্টের সঙ্গে নটীর পূজা’র নেগেটিভও পুড়ে যায়। এখন শুধু একটি আংশিক ১৬ মিলি মিটার ফিল্ম রাখা আছে রবীন্দ্র ভবনে। তবে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য সেই খড়ের চালের গোলাঘর হারিয়ে গেছে কয়েক বছর আগে চিরদিনের জন্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads