• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
নবস্বপ্নের বুনন

ফাইল ছবি

সাহিত্য

নবস্বপ্নের বুনন

  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০১৯

সকালের শুভ্র আলো পেরিয়ে টকটক করে চলতে শুরু করল রিকশা। বাশি বাজার মুহূর্তে হাজির হয়েই উঠতে হল নির্দিষ্ট বগিতে। ট্রেন ছেড়ে দেয়ার খানিক পরেই শুরু হলো বৃষ্টির ঝাপটা। বামের গ্লাস বন্ধ করে উপভোগ করছি রিমঝিম বৃষ্টি। এয়ারপোর্টে এসে মনে হলো হালকা শীত শীত ভাব। অনুভবের অনুরণনটা যেন একটু বাড়তেই থাকল। এবারের যাত্রাটা যেন মনে হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকের। ছন্দপতন, নীরবতা পেরিয়ে নান্দনিক ব্যঞ্জনার অনুভব বুকের বাম পাশে নড়েচড়ে উঠছে বার বার।

চোখবন্দি নয়নে নাড়া দিচ্ছে অনেক স্মৃতির রেখা। বলা-না-বলার দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে যেন আলো-আঁধারির লুকোচুরি। বড় বড় গাছের পাতা থেকে ঝরে পরতে থাকা বৃষ্টির পানি চুবিয়ে দিচ্ছে মনের পাটাতন। সবুজাভ গাছ-গাছালির মাঝে চলছে অনবরত বয়ে যাওয়া ‘তিস্তার’ সহোদরা ‘তিস্তা এক্সপ্রেস’। নয়া সাথীদের সঙ্গে আলাপন, কখনো হাসিতে ফেটে পড়া, কৌতুককর বিতর্ক আর জম্পেশ আড্ডায় চলছে ট্রেনের ঝক্্ ঝক্্ এগিয়ে চলা।

কখন যে এসেছি টঙ্গিতে খেয়ালই করিনি। একে একে পার হলাম জয়দেবপুর। দু’পাশের সারি সারি গাছপালা অভিবাদন জানাচ্ছে অবিরত। ছবির দেশের মতো চারদিকে সোনালি ফসল, সবুজ বীথিকা, পাখির কলরবে বিমোহিত হয়ে চলেছি। হঠাৎ কানে এলো দোতরার সুরেলা আওয়াজ। অন্ধ ব্যক্তি গাইছে ‘সৃষ্টির সেরা মানুষ আমি চক্ষু দুইটা অন্ধ/কাল হাশরে রইবে কিগো আমার দুচোখ বন্ধ’।

আবার হঠাৎ করেই চোখটা সরে এলো কলাগাছের সারি পেরিয়ে ধানক্ষেতের মাঝে খুঁটিতে থাকা নিষ্পাপ পাখি দুটির ওপর। খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে আসা বিহঙ্গের মুক্ত স্টাইলে চলাফেরা দেখে মনে হলো পৃথিবীর বিশালতায় লুকিয়ে রাখা স্রষ্টার অপার খাদ্যভান্ডারের ভার্চুয়াল জগৎ।

গফরগাঁও এসে পড়েছি। সাহিত্যের গফরগাঁও আর বাস্তবতার গফরগাঁও— এক কিনা তা বলতে পারব না। তবে বাতাসের হিমেল পরশে খারাপ লাগছে না। ট্রেন থামতেই দু’পাশে হকারেরা হাজির তাদের পণ্য নিয়ে। ছোট বাচ্চারাও আছে সেই দলে। স্কুলে যাওয়ার বদলে যাত্রী সেবায় ব্যস্ত আমাদের ‘অবহেলিত নায়কেরা’।

মনে পড়ে গেল গত রাতে এক প্রোগ্রামে হাজির ছিলাম। এক বক্তার কথায় মগজে আঘাত লেগেছে আমার। তার সহপাঠী রাম নারায়ণের কথা বলছিলেন তিনি। অসম্ভব মেধাবী এক ছাত্র চতুর্থ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় পিতার অকাল মৃত্যুতে সংসারের হাল ধরেছিলেন। এ জগতকে বলার মতো কিছু না দিয়েই পরপারে চলে গেছেন কীর্তিমান এই মানুষটির ‘অবহেলিত নায়ক’ বন্ধুটি।

মেহগনি বাগানের পশ্চিম ধারে যে সাদা বাড়িটি দেখা যায়, গফরগাঁও পার হয়েই, তার পরে পুব দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় দেখি খেজুর গাছের সারি। ধান-পুকুরে সমৃদ্ধ ময়মনসিংহ জনপদে আমাদের লাস্ট স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমে হয়তো অপেক্ষমাণ গাড়িতে চলে যাব কোন এক আবাসে। সকালের কাঁচা ঘুম যে পীড়ন দিচ্ছে বার বার! নতুন প্রান্তরে প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে আড্ডা, এদেশের বীরদের সঙ্গে হবে দেখা, নাম না জানা নায়কদের সঙ্গে বুক মিলিয়ে হয়তো চলবে আগামীর পথ চলা। আলোর পরশের স্টিমার ছুটে যাবে নাবিককে সঙ্গী করে। আরামদায়ক ব্যস্ততার জৌলুশ ঘুচিয়ে নেয়ে-ঘেমে কাটাতে চাই এদেশের জলহাওয়ায়, মাটিতে— নবস্বপ্ন বুননের প্রতীক্ষায়।

আরিফ সাকি

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads