পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার পর ইরানের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ইরানের মোটরযান খাতসহ স্বর্ণ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর রফতানি বাজারকে ক্ষতিগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে গঠন করা এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে মঙ্গলবার সকাল থেকে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি এই পদক্ষেপকে 'মনস্তাত্বিক যুদ্ধ' বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার শর্ত ভঙ্গ করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ‘মারাত্মক পরিণামের’ সম্মুখীন হবেন বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০১৫ সালের ওই পরমাণু চুক্তির অংশ হিসেবে থাকা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এই মার্কিন সিদ্ধান্তে ‘গভীর দুঃখপ্রকাশ’ করেছে। সব পক্ষকে চুক্তির প্রতিশ্রুতি মেনে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেছে তারা।
কোন কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে?
ট্রাম্পের সই করা এক নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী নিম্নোক্ত খাতে পুনর্বহাল হবে নিষেধাজ্ঞা:
১. ইরান সরকারের মার্কিন ডলার কেনা বা সংগ্রহ
২. স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু কেনাবেচার ক্ষেত্রে
৩. গ্রাফাইট, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, কয়লা ও শিল্প কারখানার কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের আমদানি
৪. ইরানি রিয়াল সংক্রান্ত লেনদেন
৫. ইরানের সার্বভৌম ঋণ খাত
৬. মোটরযান খাত
৭. বন্দর কার্যক্রম, জ্বালানি, জাহাজ ও জাহাজ নির্মাণ সংক্রান্ত খাত
৮. পেট্রোলিয়াম বা জ্বালানি তেল সংক্রান্ত লেনদেন
৯. ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বিদেশী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেন
এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আশা করবো সব রাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নেবে যার ফলে ইরানের সামনে যে কোনো একটি পথ খোলা থাকে: হয় তারা বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা তৈরী করা ও বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরুপ কার্যক্রম বন্ধে করে বিশ্বের অর্থনীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবে, অথবা সারা বিশ্ব থেকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী বলছে?
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে পরমাণু চুক্তি বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভূমিকা পালন করছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ইরানের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্থ না হয় তা নিশ্চিত করতে কি ধরণের আইন রয়েছে সেটিও উল্লেখ করা হয় ওই বিবৃতিতে।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা তার এক বক্তব্যে জানান, মে মাসে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসার পর এরই মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ইরান। ইরানের মূদ্রা রিয়াল প্রায় ৮০% মূল্যহ্রাস হয়েছে।