• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
খাশোগির টুকরো টুকরো দেহাংশ কুয়ায়-বাগানে!

নিহত জামাল খাশোগি

ছবি : ইন্টারনেট

মধ্যপ্রাচ্য

খাশোগির টুকরো টুকরো দেহাংশ কুয়ায়-বাগানে!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০১৮

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুন হয়েছেন ২ অক্টোবর। তার দেহের খোঁজ মিলল ২১ দিন পরে। এক ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা আজ বুধবার জানিয়েছে, ইস্তানবুলের সৌদি কনসাল জেনারেলের বাড়িতেই মিলেছে খাশোগির খণ্ড-বিখণ্ড দেহ। মাথাটি কেটে নিয়ে এমনভাবে তা বিকৃত করা হয়েছে, যাতে চেনাই দুষ্কর হয়। বাকি দেহের বিভিন্ন টুকরো মিলেছে বাগানে ও কুয়ায়। এদিকে আজই সৌদি যুবরাজের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা গিয়েছে খাশোগি-পুত্রকে।

খাশোগি দেহাংশের খবর সামনে আসার কিছু আগেই খাশোগি-খুনে জড়িত সন্দেহে যে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে সৌদি প্রশাসন। ইস্তানবুলে তাদের বিচারের দাবি জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান। এই খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই নাম উঠে এসেছে সৌদি যুবরাজের মুখ্য পরামর্শদাতা, সৌদ আল-কাহতানির নাম। বছর খানেক আগে তিনি টুইট করেছিলেন, ‘আমি সৌদি রাজ পরিবারের আজ্ঞাবহ কর্মচারী মাত্র। ওদের নির্দেশ ছাড়া আমি এক পা-ও চলি না।’ সৌদি যুবরাজের মুখ্য পরামর্শদাতা, সেই সৌদ আল-কাহতানিকেই খাশোগি খুনের মূল চক্রী বলে মনে করছেন তুর্কি তদন্তকারীদের একাংশ। তাদের দাবি, রিয়াধ থেকে কাহতানিই স্কাইপের মাধ্যমে হিট-স্কোয়াডকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘ওই কুকুরটার মুন্ডু কেটে আনো।’

কিন্তু কার কথায়? সৌদি প্রশাসনের দাবি, ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনসুলেটে ওই খুনের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এখতিয়ারের বাইরে গিয়েই সেদিন ওই কাণ্ডটা ঘটিয়েছিল ১৫ জনের স্কোয়াড। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের দাবি, বেশ কয়েক দিন ধরে খুনের ছক কষা হয়েছিল। পার্লামেন্টে দলীয় বৈঠকে এরদোয়ান বলেন, ‘এই রাজনৈতিক খুনের দায় শুধু স্কোয়াডের ঘাড়ে চাপালে হবে না। কার নির্দেশে এমনটা ঘটল, সেটা জানতেই হবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন, সব সত্যি সামনে আসুক। তিনি এটাও জানান যে, সৌদি রাজা এবং যুবরাজ নিজে তাকে বলেছেন এই ব্যাপারে তারা কিছু জানতেন না। কিন্তু তদন্তে যদি রাজ পরিবারের যোগ প্রমাণিত হলে তিনি চূড়ান্ত হতাশ হবেন।

প্রশাসন আ়ড়াল করার চেষ্টা করলেও, সাংবাদিক খুনে সৌদি রাজপরিবার কিন্তু ক্রমশ জড়িয়েই পড়ছে। বিশেষত, কাহতানির ওই স্কাইপ-নির্দেশ সামনে আসার পরে। ব্লগ লেখার সূত্রে রাজ পরিবারের চূড়ান্ত অনুগত হিসেবে ২০০০ সালের গোড়ায় সৌদি প্রশাসনের নজরে আসেন বছর চল্লিশের এই কাহতানি। রাজ পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষায় তখন আস্ত একটা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বও দেওয়া হয় তাকে। তারপর থেকে যুবরাজের ডান হাত হিসেবে শুধুই উত্থান। কাহতানির বাড়বাড়ন্ত গত বছর অন্তত দু’টি ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে যায়। এক, পদত্যাগকারী লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে অপহরণ করে রিয়াদে আটকে রাখা। দুই, দুর্নীতির অভিযোগে নেতা-মন্ত্রী-রাজকুমার থেকে শুরু করে দেশ জুড়ে ব্যাপক ধরপাক়ড়।

খাশোগি খুনে জড়িত সন্দেহে কাহতানিকে বহিষ্কার করেছে সৌদি প্রশাসন। পরে শোনা যায়, তাকে আটক করাও হয়েছে। কিন্তু আঙ্কারার দাবি, সৌদি যুবরাজের সোশ্যাল মিডিয়া ব্রিগেডেরও প্রধান কাহতানি এখনো দিব্যি টুইট করে চলেছেন। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, খাশোগিকে খুনের পরে চারটা ফোন যায় যুবরাজের অফিসে। ওই স্কোয়াড-সদস্যকে চিহ্নিতও করা গিয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে খাশোগির এক ‘বডি ডাবল’-কেও ফাঁস করেছে সংবাদমাধ্যম। এরদোয়ান যদিও আজ দাবি করেছেন, সৌদি হিট স্কোয়াড অনেক তথ্য-প্রমাণ মুছে ফেলেছে। দিন কয়েক আগে থেকে কনসুলেটের ক্যামেরা-সিস্টেমের হার্ড ডিস্ক খুলে ফেলা হয়েছিল।

এরই মধ্যে রিয়াধে শুরু হয়েছে ৩ দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন। সেখানে যোগ দেয়নি গোল্ডম্যান স্যাক্স অ্যান্ড জেপি মর্গ্যান, উবের। শেষ মুহর্তে সরে দাঁড়িয়েছেন আইএমএফ-প্রধান ক্রিস্টিল ল্যাগার্ড। চাপ বাড়াচ্ছে ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানি। রিয়াদকে অস্ত্র রফতানি করবেন না বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads