• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

বিবিধ

শেখ হাসিনা

বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা

  • প্রকাশিত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর

 

 

বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা। টুঙ্গিপাড়াতেই বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সাল থেকে ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ওঠেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট (কিছু বিপথগামী সেনা অফিসার) এক সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হয়। দুই বোন সে সময় বিদেশ তথা জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান ।

চলতি মেয়াদসহ চারবারের (১৯৯৬-২০০১,২০০৯-২০১৪, ২০১৪-২০১৯, ২০১৯-বর্তমান) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্বনেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। শান্তি, শিক্ষা, সম্প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। যা সম্ভব হয়েছে তাঁর দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির পাশাপাশি ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ডিগ্রি ও সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি।  

এই অর্জনের মধ্যে রয়েছে- ১৯৯৭ সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল, ইংল্যান্ডের অ্যবার্টয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসফি, লায়ন্স ক্লাবসমূহের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপ্রধান পদক’, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রোটারি ফাউন্ডেশনের ‘পল হ্যারিস ফেলো’ পদক, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি ‘নেতাজি মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’ প্রাপ্তি। ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো থেকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার, সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে মাদার তেরেসা পুরস্কার, মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন কর্তৃক এম কে গান্ধী পুরস্কার, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ‘Medal of Distinction’ পদক ও ‘Head of State’ পদক লাভ। ১৯৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডেসিকোটাম’ (ডক্টর অব লিটারেচার, হনোরিস কাউজা), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা থেকে চেরেস পদক, অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব ল ডিগ্রি অর্জন। ২০০০ সালে ব্রিজপয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব হিউম্যান লেটার, রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ কর্তৃক পার্ল এস. বাক পুরস্কার, রোটারি ফাউন্ডেশন কর্তৃক পল হ্যারিস ফেলো, ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় Doctor Honorius Causa প্রদান করে। ২০০৫ সালে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন। ২০১০ সালে শিশু মৃত্যু হ্রাসসংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ MDG Award, আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অসমান্য অবদানের জন্য St. Petrsburg University সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি, বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯’-এ ভূষিত। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের স্পিকার হতে Global Diversity Award প্রাপ্তি, স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর বিশেষ অবদানের জন্য ITU, South South News এবং জাতিসংঘের আফ্রিকাসংক্রান্ত অর্থনৈতিক কমিশন যৌথভাবে ‘South South Award 2011’ পুরস্কার, গণতন্ত্র সুসংহতকরণে প্রচেষ্টা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ডফিন বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রান্স স্বর্ণপদক, বাংলা একাডেমির সম্মাননা সূচক ফেলোশিপ পান। ২০১২ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হতে ডক্টর অব লিটারেচার বা ডি-লিট ডিগ্রি, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো হতে Cultural Diversity পদকে ভূষিত। ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যবিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো-অপারেশন হতে ‘South South Award’, ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় সাউথ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক ‘Manthan Award’, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দারিদ্র্য ও অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় Diploma Award পদকে ভূষিত।

২০১৪ সালে নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারের স্বীকৃতি হিসেবে ইউনেস্কো ‘শান্তিবৃক্ষ’ পুরস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতৃত্বের জন্য ইউএন পরিবেশ পুরস্কার (চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ), সমুদ্রসীমা জয়ের জন্য সাউথ সাউথ পুরস্কার, খাদ্য উৎপাদন ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মাননা সার্টিফিকেট গ্রহণ। ২০১৫ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ ITU (International Telecom Union)-এর ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’, রাজনীতিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে ‘WIP (Women in Parliament) Global Award’, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টর অব দ্য ইউনিভার্সিটি’ ডিগ্রি অর্জন। ২০১৬ সালে লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম-এর পক্ষ থেকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি হতে বিশেষ সম্মাননা প্রদান। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট)’ ডিগ্রি, বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকংভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন দুটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। 

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন-জার্মানি, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও পারস্পরিক সন্তোষজনক সম্পর্ক, নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ, বিশেষ করে নারী ও শিশু এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতায় স্বীকৃতি হিসেবে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসায় বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম তাঁকে নানা উপাধি দিয়েছেন। যেমন— বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধান, বিশ্বে সৎ নেতৃত্বের তালিকায় অবস্থান-৩য়, নারী-ক্ষমতায়নে ১৫৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭ম। এছাড়াও বিভিন্ন উপাধি— মাদার অব হিউম্যানিটি, ক্যারিশম্যাটিক লিডার, লেডি অব ঢাকা, প্রাচ্যের নতুন তারকা, বিশ্বের নেতা, নারী-অধিকারের স্তম্ভ, বিশ্ব শান্তির দূত, মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা, জোয়ান অব আর্ক, বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা, বিশ্বমানবতার বিবেক, বিরল মানবতাবাদী নেতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৮ সালে তাঁর অবস্থান ছিল ২৬তম এবং ২০১৭ সালে ৩০তম। টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় নাম এসেছে এবং লিডারস ক্যাটাগরিতে ২৭ জনের মধ্যে ২১তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদের একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। উল্লিখিত সম্মাননা, পদক ও ডিগ্রি প্রাপ্তিতে তিনি আলোকিত করেছেন দেশ, জাতি ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর এবং শেখ হাসিনার দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এতটাই অগোছালো এবং কোন্দল ছিল যে দলটি নানা উপদলে বিভক্ত ও নেতৃত্বশূন্য ছিল। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সবার মধ্যে একটা ধারণা ছিল যে, আওয়ামী লীগের পরিণতি মুসলিম লীগের মতো হবে। তার ওপর এই দলটির বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা এতটাই তীব্র ছিল যে, এসবকে প্রতিহত করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে দাঁড়ানো মোটেই সহজ ছিল না। এর ওপর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত ও একটি ঘোলাটে সামরিক শক্তি নতুনভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার সময়ে শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলেন, নতুন করে সবকিছু গোছাতে লাগলেন, অভিজ্ঞতাও ছিল কম। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দল চালানো অনেক কঠিন ছিল।  ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পর তিনি মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন কেবল একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে নয়, জাতীয় রাজনীতির হাল ধরতে, সেনাশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে এবং অগোছালো আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য। এদিকে আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সুসংগঠিত ঠিক আবারো শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও জীবননাশের হুমকি। অধিকন্তু পিতার মতো বরাবরই তিনিও ছিলেন ঘাতকের ষড়যন্ত্রের টার্গেট। একবার নয়, দুইবার নয়, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তাঁকে এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়। ওই হামলায় ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং নেত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হন। ওই হামলায় নিহতের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমান অন্যতম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার একটি।

সব বাধাবিপত্তি ও দেশি-বিদেশি চক্রান্ত উপেক্ষা করে অবশেষে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়। আবারো শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন, হামলা-মামলা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। সারা দেশে ছাত্রদল, জামায়াত-শিবিরদের তাণ্ডব জাতি দেখেছে নিজ চক্ষে। ২০০৭ সালের ১/১১-এ সেনাশাসিত সরকার আবারো আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছে, শেখ হাসিনাসহ অগণিত নেতাকর্মীকে জেলে আটক করেছে; হত্যা, নির্যাতন, হামলা-মামলা দিয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং মানুষের আশ্রয় ও শেষ ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। শত বাধাবিপত্তি, জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা নিয়ে এ দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায় এবং শেখ হাসিনা ৪র্থ বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।   

জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এবং ধাপে ধাপে তার বাস্তবায়ন করছেন। দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, শিক্ষার আধুনিকায়ন ও কর্মমুখী শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও এর আওতা বৃদ্ধি, খেলাধুলায় ব্যাপক উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ,  নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, গড় আয়ু, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, মেগা প্রকল্পসমূহ ইত্যাদির যেমন স্বপ্ন দেখেছিল ঠিক তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেও দেখাচ্ছেন। বারবার মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখা; বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুর শোক নিয়ে বেঁচে থাকা, জেলজুলুম সহ্য করা, অগণিত নেতাকর্মীর দুঃখ-কষ্ট ও বিপদে কাছে থাকা নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। অসংখ্য দেশি-বিদেশি সম্মানসূচক পদকে ভূষিত হওয়া এবং বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে সম্মানিত/আলোকিত করা, স্বল্প সময়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা তথা এ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখানো নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads