• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

বিবিধ

কথিত ‘গণ-আদালতে’ বানরের ফাঁসি

  • রবিউল কমল
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর ২০১৯

মানুষের মৃত্যুদণ্ডের কথা অনেক শোনা যায়। কিন্তু বানরের কি কখনো মৃত্যুদণ্ড হয়, এমন অতি অমানবিক কাণ্ড কি মানুষ ঘটাতে পারে? অবাক লাগলেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে আমাদের দেশে। মৌলভীবাজারে একটি বানরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একজন শিশুকে নিহত এবং ৪০ জন বিভিন্ন বয়সি মানুষকে আহত করার দায়ে ওই বানরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। প্রথমে বানরটির জন্য একটি কথিত ‘গণ-আদালত’ বসানো হয়। ওই আদালতেই জনগণ বানরটির ফাঁসির রায় দেন। আর ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে।

স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাতে বানরটি ওই গ্রামে আক্রমণ চালায়। এতে তানিয়া বেগম (৮) নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

এটিই বানরের প্রথম আক্রমণ নয়। এমন ঘটনা বানরটি প্রায় ঘটাত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক মাসে বানরটি সেলিম আহমদ (৮), মারুফ আহমদ (১০), বিউটি বেগম (১১) ছাড়াও রোকনপুর, বড়খলা, কাঠালতলী ও গৌড়নগর এলাকার শিশুসহ প্রায় ২৫ জনকে আঁচড়ে-কামড়ে আহত করেছে। যার মধ্যে অনেকের অবস্থা বেশ গুরুতর ছিল। অনেককে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়।

তবে এই বানরকে ধরা খুব সহজ ছিল না। বানরটি সব সময় মানুষের নাগালের বাইরে থাকত। এজন্য এলাকাবাসীকে একটি কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। মঙ্গলবার সকালে এলাকাবাসী প্রথমে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মেশায়। পরে ওই খাবার বানরকে খাওয়ানো হয়। তারপরও বানরকে ধরা সহজ হয়নি। সারা দিন ধাওয়া করে বিকেলের দিকে বানরটিকে ধরে ফেলে এলাকাবাসী। এরপরই কথিত ‘গণ-আদালতে’ বানরটির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে কয়েকটি চা বাগান ও বনাঞ্চল রয়েছে। পাহাড় ও চা বাগানে অনেক বানরের বাস। এরা অনেক সময় খাবারের সন্ধানে দলবলে লোকালয়ে এসে ফসল খেয়ে কিংবা নষ্ট করে চলে যায়। কিন্তু মানুষের ওপর কখনো আক্রমণ করেনি। কিন্তু গত এক মাস আগে গলায় লাল রঙের রশি বাঁধা অবস্থায় বানরটি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব শুরু করে। বানরটি হঠাৎ করে মানুষের ওপর আক্রমণ করত। ভোরবেলা, দুপুর ও সন্ধ্যায় একা পেলেই লোকজনের ওপর হামলা করেছে। বেশিরভাগ আক্রমণের শিকার হচ্ছিল স্কুলগামী শিশুরা। বিভিন্ন সময় বানরটি যেসব শিশুকে আক্রমণ করেছে তাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর।

এর আগে, বানরের এমন কাণ্ডে মৌলভীবাজার ওয়াইল্ড লাইফ বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেখানে ঢাকার ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট পাঠানোর কথা বললেও তার পাঠায়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াইল্ড লাইফ মৌলভীবাজারের রেঞ্জ কর্মকর্তা জৌলহাস উদ্দিন বলেন, আমরা যে দিন পরিদর্শনে যাই সেদিন বানরটি অনেক খুঁজেও পাইনি এবং আমাদের কাছে সেই ধরনের সরঞ্জামও নেই। আমরা ঢাকার ক্রাইম কন্ট্রোল টিমকে খবর দিই। টিম আসার কথা ছিল; কিন্তু তার আগেই বানরটিকে হত্যা করা হয়েছে এমন খবর পেয়েছি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ক্রাইম কন্ট্রোলের পরিচালক এস এম জহির আকন বলেন, আমরা খবর পেয়েছিলাম কিন্তু এরই মধ্যে বান্দরবানে একটি হাতি মারা যাওয়ায় আমাদের টিম সেদিকে চলে যায়। সেখান থেকে আসার পর যখন বড়লেখায় পাঠাব এরই মধ্যে খবর পেয়েছি বানরটি মেরে ফেলা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads