• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ফাইল ফটো

জাতীয়

নির্বাচনে আসা বিএনপির সিদ্ধান্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ মে ২০১৮

regular_2015_news_1525276328

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে অন্য দলকে বাধ্য করা যায় না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল করবে না, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। এক দলের সিদ্ধান্তের ওপর তো আমি চাপিয়ে দিতে পারি না যে, তোমাদের নির্বাচন করতে হবে। না করলে তোমাদের ধরে নিয়ে যাব জেলে।’ এ প্রসঙ্গে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসে নাই, ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। মানুষ হত্যা করেছে, স্কুল, অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে। গাছ কেটেছে, পুলিশ মেরেছে। এখন নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, এটা সম্পূর্ণ তাদের ওপর নির্ভর করে।’

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। সম্প্র্রতি সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে বিস্তারিত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, রোহিঙ্গা ইস্যু, কোটা সংস্কার আন্দোলন, পরিবহন খাতের নৈরাজ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিএনপি নির্বাচনে আসলে জয়ের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময় নির্বাচনে জয়ী হব এবং এটা আমরা আশাও করি। কারণ এত উন্নয়ন করার পরও জনগণ যদি ভোট না দেয়, যদি আসতে না পারি। আমরা না আসলে উন্নয়ন যে নষ্ট হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায় তা ৯৬ থেকে ২০০১ সালের উন্নয়নের পর জনগণ দেখেছে। নির্বাচনে জেতাটা আমি জনগণের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণ যদি মনে করে উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকবে তাহলে তারা নৌকায় ভোট দেবে, আমরা আবার ক্ষমতায় আসব।

এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি বলছে তাদের নেত্রীকে মুক্ত না করলে নির্বাচনে আসবে না- তাদের নেত্রীকে রাজনৈতিকভাবে জেলে পাঠানো হয়নি। আমি জেলে পাঠালে রাজনৈতিকভাবে ২০১৫ সালের পর আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করার জন্যই পাঠাতে পারতাম। যখন তিনি হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করাল তখনই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম। কিন্তু আমি রাজনৈতিকভাবে করতে চাইনি।

খালেদা জিয়ার মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একটা মামলা ১০ বছর চলেছে ১৫২ না ১৫৪ বার সময় নিয়েছে ৩ বার কোর্ট বদল হয়েছে ২২ বার রিট হয়েছে। তারপরও বিএনপির এত বড় বড় আইনজীবী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী তারা কিছুতেই প্রমাণ করতে পারল না, খালেদা জিয়া এতিমখানার নামে টাকা এনে দুর্নীতি করেনি।

কোর্ট রায় দিয়েছে, এখানে আমাদের কাছে দাবি করলে কিছু হবে না। যেখানে আইনগতভাবে কারাগারে গেছে, সেখানে এটা আইনগতভাবেই ফাইটব্যাক (আইনি লড়াই) করতে হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমাদের কাছে দাবি করে কী লাভ হবে? আমরা কী করতে পারব। আমি তাকে গ্রেফতার করিনি। বরং আমি একটা অন্যায় কাজ করেছি (মৃদু হেসে)। একজন নিরপরাধ মানুষ ফাতেমা বেগম। জেলখানায় তার পরিচারিকা লাগবে। আপনারা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কোনো দেশে পরিচারিকা নিযুক্ত করেছে কি না। বিএনপির দাবি মেনে নিয়ে ফাতেমাকে জেলখানায় নিযুক্ত করা হয়েছে। জানি না মানবাধিকার সংগঠনগুলো এত সোচ্চার, কিন্তু এখন তারা কেন এ বিষয়ে কথা বলে না। নিরপরাধ মানুষ কেন জেল খাটবে?

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সাজাপ্রাপ্ত তারেকের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। নিশ্চয়ই তাকে ফিরিয়ে আনব। তিনি বলেন, আমরা অনেক দেশ থেকে এ ধরনের আসামি নিয়ে এসেছি।

তারেককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান করা হলো। বিএনপি নাকি সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় দল, তাদের দলে কি একজন যোগ্য লোকও নেই? এ ধরনের দণ্ডিত ব্যক্তিকে তারা চেয়ারম্যান করে? এ ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়া দল আর নেই।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অনিষ্পন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে, ওই সময় কারা মিশছে সে বিষয়ে কাউকে সোচ্চার হতে দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর পিছিয়ে পড়াদের সুযোগ করে দিতে কোটা পদ্ধতি করা হয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যেহেতু তারা আন্দোলনে নেমেছে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আর কথা বলার কিছু নেই।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি আছে। তালিকায় আসা আগ্রহীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। অন্যথায় স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট হবে। ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক গণপরিবহন নৈরাজ্য ও দুর্ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আইনের সংশোধনী আনা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু গাড়িচালকদের দোষ না দিয়ে পথচারীদেরও সচেতন হওয়া ও  ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান। এ কাজে গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা চান তিনি।

কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। সম্মেলনের ঘোষণায় রোহিঙ্গাবিষয়ক অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে। যেটা আমাদের সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করি। শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা আমাদের দেশে এসেছেন, তাদের মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক, তারাও চান মিয়ানমার থেকে যে ১১ লাখ মানুষ এসেছে, তারা তাদের দেশে ফিরে যাক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads