• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
হজযাত্রায় এবারো বিশৃঙ্খলার শঙ্কা

হজযাত্রীদের শেষদিকে পাঠালে লাভ বেশি হয় তােই প্রতি বছরই এই সুযোগ নেয় বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

হজযাত্রায় এবারো বিশৃঙ্খলার শঙ্কা

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ১৯ জুন ২০১৮

হজযাত্রীদের শেষদিকে পাঠালে লাভ বেশি। প্রতি বছরই এই সুযোগ নেয় দেশের অনেক বেসরকারি হজ এজেন্সি। তাদের এই অতি মুনাফার লোভের কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা; গত কয়েক বছর যাত্রী সঙ্কটে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে ২০টি করে ফ্লাইটও বাতিল করতে হয়েছে। একই কারণে এবারো একই সময়ে হজ ফ্লাইট বাতিল হাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবশ্য ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর হজযাত্রী সঙ্কটে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সেজন্য তারা কাজ করে যাচ্ছে। বিশৃঙ্খলা রুখতে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে প্রত্যেক হজ এজেন্সিকে নিবন্ধিত যাত্রীর জন্য শিডিউল অনুযায়ী ফ্লাইট বুকিং করে হজ অফিস থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করা। এরপর ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী সৌদিতে বাড়ি ভাড়া করা। এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্কও করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ভালো সেবার জন পুরস্কারও ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয়। এবার ৫২৮টি বেসরকারি হজ এজেন্সি হজযাত্রী পাঠাবে।

মন্ত্রণালয়ের হজ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার জন। যাত্রীদের মধ্যে মোট ৬৪ হাজার ৫৯৯ জনকে পরিবহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাদের সৌদি পাঠাতে ১৫১টি ডেডিকেটেড ফ্লাইট এবং হজ শেষে দেশে আনতে ১৪৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এই শিডিউল ঠিক রাখতে লিজে আরো দুটি উড়োজাহাজ আনার চেষ্টা করছে বিমান। বাকি হজযাত্রী পরিবহন করবে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স। ঢাকা থেকে বিমানের হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৪ জুলাই, শেষ হবে ১৪ আগস্ট। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২৭ আগস্ট, শেষ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের হজযাত্রী পরিবহনে গত ৮ মে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স হজ ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণা করে। পরদিন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ) এসএম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে অংশগ্রহণকারী সব এজেন্সির বিপরীতে নিবন্ধিত হজযাত্রীর জন্য শিডিউল অনুযায়ী ফ্লাইট বুকিং সম্পন্ন করতে বলা হয়। বুকিং সম্পন্নের পর এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে ২০ মে’র মধ্যে হজ অফিস থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতেও বলা হয় চিঠিতে। কিন্তু ঘোষিত ফ্লাইট শিডিউল ২০ মে’র মধ্যে সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশনের অনুমোদন না পাওয়ায় টিকেট বুকিং নেয়নি বিমান। পরবর্তীতে ফ্লাইট শিডিউল অনুমোদন পাওয়ার পর টিকেট বুকিং শুরু করে।

এ কারণে এজেন্সি মালিকদের অনেকে টিকেট বুকিং না দিয়েই বাড়ি ভাড়া করতে সৌদি চলে যান। সৌদিতে বাড়ি ভাড়া শেষ করে এখনো অনেকে টিকেট বুকিং দিচ্ছেন। সৌদির নিয়ম অনুসারে হজ ফ্লাইট বুকিংয়ের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী প্রত্যেক যাত্রীর জন্য মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া, পরিবহন ও অন্যান্য সার্ভিসের চার্জ অগ্রিম দিতে হয়। সেসব সম্পন্ন করে হজ ভিসার আবেদন করতে হয়।

হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার কারণ জানতে চাইলে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু হজ এজেন্সিকে দায়ী করেন বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল নাসের। তার আশঙ্কা, এই চক্রের কারণে এবারো হজ মৌসুমের মাঝামাঝি সময় হজ ফ্লাইট বাতিল হতে পারে। আশঙ্কার ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, গ্রামে-গঞ্জে কম টাকায় হজ করানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবস্থাপনা অস্থিতিশীল করে চক্রটি। এই চক্রটি হাবের (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে নিলেও নিবন্ধন করে মাত্র ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা দিয়ে। তারা বাকি টাকা না দিলে এজেন্সি মালিকরা এসব হজযাত্রীর বিমানের টিকেট, সৌদিতে বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেম চুক্তিসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করতে পারে না। চক্রটি তাদের যাত্রীদের একেবারে শেষ সময়ে পাঠাতে চায় বেশি মুনাফার লোভে। এ কারণে মাঝামাঝি সময় হয় যাত্রী সঙ্কট আর শেষ দিকে থাকে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। এমন পরিস্থিতিতে গতবারও হজ ফ্লাইট নিয়ে বিপর্যয়সহ চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এবারো হবে। এছাড়া ফ্লাইট বিপর্যয়ের নেপথ্যে টিকিট সিন্ডিকেট চক্রের হাত রয়েছে। এদের কারসাজির কারণেই গত বছর বিমানের হজ ফ্লাইটগুলো বাতিল হয়েছিল।

তবে তার সঙ্গে একমত নন হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তছলিম। তিনি বলেন, এবার হজে বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। হাব আর কোনো খারাপ সংবাদের শিরোনাম হতে চায় না। লক্ষাধিক হজযাত্রী মাত্র দুটি বিমান সংস্থার মাধ্যমে পরিবহন করা হয় উল্লেখ করে হাব মহাসচিব বলেন, এ কারণে প্রতিবছর চরম অসুবিধায় পড়েন হজযাত্রীরা। ফ্লাইট বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটে। দুটি সংস্থার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন হজযাত্রীরা। এ জন্য অন্যান্য বিমান সংস্থাকেও হজযাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, এবার হজযাত্রায় যাতে কোনো ভোগান্তি না হয় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। শিগগিরই টিকেট বুকিংয়ের সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এবার হজ ফ্লাইট নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন তিনি।

রিলেটেড সংবাদ:

  1. হজের খরচ বাড়ল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads