• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
নেতারা গ্রেফতার আতঙ্কে, নতুন কর্মসূচি নেই

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা গ্রেফতার আতঙ্কে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

কোটা আন্দোলন

নেতারা গ্রেফতার আতঙ্কে, নতুন কর্মসূচি নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ জুলাই ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা গুম ও গ্রেফতার আতঙ্কে চুপ মেরে গেছেন। এর ফলে নতুন কর্মসূচিও দেওয়া হচ্ছে না। নেতারা এখন ব্যস্ত নিজেদের বাঁচাতে। গত সপ্তাহে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের একের পর এক হামলা ও কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।   

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কোটা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক, জসিম ও মশিউর গ্রেফতার হয়েছেন। মাহফুজ নামের আরেকজন নিখোঁজ। যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক অসুস্থ শরীরে আত্মগোপনে আছেন।

জানতে চাইলে পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমরা গুম আতঙ্কে রয়েছি। জানি, খুঁজে খুঁজে এখন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমরা যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি তাদের ভবিষ্যৎ শেষ। সরকার আমাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করেছে। ফলে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। এ কারণে নতুন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে যারা আটক আছেন, তাদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মাসুদুর রহমান মোট চারটি মামলায় আটজনের গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘হয়রানির শিকার’ আন্দোলনকারীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন একদল আইনজীবী। এ বিষয়ে জানতে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, যারা গ্রেফতার ও হয়রানির আতঙ্কে আছেন, চাইলে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। ২০ জন আইনজীবী নিজ খরচে এই  সহায়তা দেবেন।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে’ : এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা গর্ব করি। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পিটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বিনা অপরাধে রিমান্ডে নিয়ে যাচ্ছে। আজ এখানে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারেননি। এটি এখন একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই মৃত্যুপুরীর অবসান কে ঘটাবে? এখন আর সময় নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। যে কয়েকজন আসুক তাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আমরা এখন বিপর্যয়ের মুখে। এখন আর মানববন্ধন, বিবৃতি এগুলোর সময় নেই। সরাসরি কর্মসূচিতে যেতে হবে। একজন হোক, দুজন হোক তাদের নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে একটা তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে, যার নাম মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ। এই তোরণ দিয়ে এই ইতিহাসের বুকে পা ফেলে যখন আপনারা এখানে ঢুকবেন, এখানে অপরাজেয় বাংলা দেখবেন, শহীদ মিনার দেখবেন প্রত্যেকটি জায়গা সংগ্রামের চিহ্ন নিয়ে আছে। অথচ আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখি, একটি আন্দোলন, একটি দাবি এবং যে দাবির যৌক্তিকতা শুধু আজকে নয়, বহুদিন ধরে। আমরা দেখেছি, সরকারি পর্যায় থেকে একটা কমিটিও গঠন করা হয়েছে দ্রুত ফলাফল দেওয়ার জন্য। কিন্তু সবাই দেখেছেন কি ধরনের নৃশংসতা চালানো হলো। এর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। হতভম্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করছি। এটা কেমন বিশ্ববিদ্যালয়, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা গর্ব করি। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পিটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তাকে বিনা অপরাধে রিমান্ডে নিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর বিচার দাবি করছি।

বিচার দাবি প্রগতিশীল ছাত্র জোটের : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে জোটের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ বলেন, গত ৩০ জুন থেকে ৩ জুলাই ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। একই সঙ্গে পুলিশের হয়রানি ও ৫৪ ধারায় বহুজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চরম দমনমূলক পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রায় আড়াই মাস আগে। কিন্তু এ নিয়ে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা আবার রাস্তায় ফিরে এসেছে। তাদের অভিযোগ সরকার বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছে। শিক্ষার্থীদের নতুন আন্দোলনের মুখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটা রাখার পক্ষে সংসদে বক্তব্য আসায় ছাত্রদের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের এমন অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দাবি করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা রাখা হোক এবং তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে পুনর্বিবেচনা করে কীভাবে বা কতটুকু হবে, সেটাতো এই কমিটি দেখবে। একটি প্রশ্ন হলো, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কত এবং তারা এর থেকে উপকৃত হচ্ছেন কি না এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা, তাদের জন্য কত অংশ আসবে? এগুলোওতো দেখা দরকার। সেজন্য এটার সমাধান সহজ নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads