• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ফের মারমুখী ছাত্রলীগ, রেহাই পেলেন না শিক্ষকরাও

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন

ফের মারমুখী ছাত্রলীগ, রেহাই পেলেন না শিক্ষকরাও

  • ঢাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ ও গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। গতকাল রোববার দুপুরের দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। শিক্ষক ও ছাত্রীরাও এ থেকে রেহাই পায়নি। এর আগেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ।

এ দিন বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের সময় নির্ধারিত ছিল। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে। একই সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মানববন্ধন করে এর স্বপক্ষের কর্মীরা। ১১টার দিকে শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, স্কুল কার্যক্রমবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, ঢাবি শাখার বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক আল আমীন রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, কবি জসিম উদ্দিন হলের সভাপতি আরিফ হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বিপরীত পাশে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সাধারণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করা শিক্ষকদের উদ্দেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ‘রাজাকার’সহ বিভিন্ন কটূক্তি করলে অনেকে এর প্রতিবাদ করেন। এর মাঝে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের একটি বাস এসে শহীদ মিনারের পাশে থামলে বাস প্রায় ৫০ জন ছাত্রী নেমে ছাত্রলীগের মানববন্ধনে যোগ দেন। ইডেন ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের কিছু ছাত্রীও এতে যোগ দেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের উদ্দেশে রওনা হয়। মিছিলটি রাসেল টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের সদস্যরা তাদের সামনে ও পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে। এতে কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় শিক্ষকদেরও ধাক্কা দেন ছাত্রলীগের নেতারা। এতে কয়েকজন শিক্ষক মাটিতে পড়ে যান। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবার শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন। কর্মসূচিতে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দীন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

তানজীম উদ্দীন খান বলেন, ‘মস্তিষ্কহীন প্রশাসনিক ব্যক্তিরা আমাদের পরিচালনা করেছেন, যার ফলে বার বার এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়ানো সব শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব।’ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছাত্রলীগ বাধা দিচ্ছে। অথচ প্রশাসন বলছে তারা কিছুই জানে না।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নিশ্চুপ ভূমিকার নিন্দা জানান তিনি।

অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ এর আগেও হামলা চালিয়েছিল। আমরা তাই এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রক্টর স্যারকে ফোন দিয়ে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযোগ করেছেন, আমরাই নাকি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছি?’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গত ৩০ জুন ও ১ জুলাই ঢাকা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads