• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বঙ্গবন্ধু জানতেন ‘হাসু’ হবে একদিন জাতির কাণ্ডারি

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

সংবাদ ভাষ্য

বঙ্গবন্ধু জানতেন ‘হাসু’ হবে একদিন জাতির কাণ্ডারি

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ২২ জুলাই ২০১৮

ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের বাংলাদেশ— তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনে জনতার পদভারে প্রকম্পিত রাজপথ। বাতাসে বারুদের গন্ধ। স্লোগানে স্লোগানে মুখর জনপদ। এমন এক সময়ে রাওয়ালপিন্ডিতে মারা যান এ দেশের সংবাদপত্র জগতের কৃতী পুরুষ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, মুসাফিরখ্যাত বিদগ্ধ কলামিস্ট, সবার প্রিয় মানিক ভাই। তার মৃত্যুতে এ দেশে নেমে আসে শোকের গাঢ় ছায়া। এই কৃতী পুরুষের মৃত্যুতে গভীরভাবে বেদনাহত হয়েছিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। মানিক মিয়া শুধু বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফারই সমর্থক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অভিভাবকও। শোকে মুহ্যমান বঙ্গবন্ধু মানিক মিয়ার দেহ আজিমপুর কবরস্থানে সমাধিস্থ করে সোজা পায়ে হেঁটে চলে আসেন ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসায়। সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধু-অনুরক্ত একদল তরুণ মেধাবী সাংবাদিক। সারা দিনের ক্লান্তিতে বিষণ্ন বঙ্গবন্ধু বাসার লনে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে জন্ম-মৃত্যু বিষয়ক দার্শনিক এক আলোচনায় নিবিষ্ট হন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের তৎকালীন নেতা কে জি মোস্তফা (কে জি ভাই) বঙ্গবন্ধুকে জিগ্যেস করলেন, ‘মুজিব ভাই, খোদা না করুক আপনি যদি না থাকেন তবে পরিবারের এমন কে আছেন যিনি আপনার অবর্তমানে দলের হাল ধরবেন?’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এমন তো কাউকে দেখছি না।’ এরপর গম্ভীর হয়ে গেলেন তিনি। অতঃপর তার সেই ঐতিহাসিক পাইপে কয়েকটি লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়িয়ে বলেন, ‘আমি হাসুর মধ্যে একরকম স্পিড দেখেছি, যা রাজনীতির জন্য খুবই প্রয়োজন। আমার মনে হয় হাসু রাজনীতিতে আসলে ভালো করতে পারবে।’ এই ‘হাসু’ হলেন জাতির পিতার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বরাজনীতির মেধাবী মুখ, জননেত্রী শেখ হাসিনা। ঊনসত্তর সালে এক পড়ন্ত বিকালে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর করা এই ভবিষ্যদ্বাণী আক্ষরিক অর্থেই সত্যে পরিণত হয়। ইতিহাসের বর্তমান বিন্দুতে এসে তাই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল এই সফল জননেত্রীকে গণসংবর্ধনা দেওয়া। হ্যাঁ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেই অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে অনন্য সফলতা অর্জনকারী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দিয়েছে। ৪৯ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর করা এই ভবিষ্যদ্বাণী নিছক আবেগমিশ্রিত উক্তিই ছিল না, তা ছিল নিজ কন্যা সম্পর্কে পিতার গভীর আত্মবিশ্বাস ও অহঙ্কার থেকে উত্থিত অমর বাণী।

অন্তত দুটি কারণে আওয়ামী লীগ বাঙালির ইতিহাসের ধ্রুবতারা হয়ে বিরাজমান থাকবে। এক. আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দল মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি নতুন দেশ ও একটি নতুন জাতির জন্ম দিয়েছে। দুই. জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দলের তথা জাতির কাণ্ডারি হিসেবে অভিষিক্ত করেছে। বর্তমানের ইতিহাস প্রমাণ করে, শেখ হাসিনা কেবল বঙ্গবন্ধুর রক্তেরই সফল উত্তরাধিকারী নন, তিনি মুজিব আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের সার্থক রূপকারও বটে। আজ শেখ হাসিনার চোখের দিকে তাকালেই বঙ্গবন্ধুর অবয়ব জাতির মানস চোখে ভেসে ওঠে— ব্যাকব্রাশ করা সেই চুল, সফেদ পায়জামা-পাঞ্জাবি ও কালো মুজিব কোট পরা কাঁঠালচাপা রঙের শাল কাঁধে জড়ানো একজন সুপুরুষ বাঙালি। যার অঙ্গুলি হেলনে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো উদ্বেলিত-উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কখনো পল্টন ময়দান, কখনো আরমানিটোলার মাঠ, আবার কখনো বাহাদুরশাহ পার্ক— এ দেশের লক্ষ কোটি মানুষ।

জাতির প্রিয় মুখ শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ— কারণ এই নেত্রীর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তীর্ণ হয়েছে, মহাকাশ জয় করেছে। জাতিসংঘ শান্তি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও স্বীকৃতি ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার মুকুটে সুশোভিত হয়েছে। তার মেধা, নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ আরো অন্তত উনিশটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি।

পাশের দেশে মানবতার বিপর্যয় দেখে শেখ হাসিনা এক দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেন দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আরাকানিজদের বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় দিয়ে। বিমুগ্ধ বিশ্ব এর স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’-র সম্মানে অভিষিক্ত করে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আর এক পা এগোলেই আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানিত করা হবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে। এটা সময়ের ব্যাপারমাত্র। বঙ্গবন্ধুর একদিনের লালিত স্বপ্ন আজ বাস্তবের স্পর্শে সজীব হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা কেবল বাঙালি জাতির কাণ্ডারি নন, তিনি আজ বিশ্ব নেতৃত্বের প্রথম কাতারের একজন সূর্যসৈনিক। জয়তু শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads