রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) বরাবরই বিশেষ যত্নবান। এ ছাড়া শিক্ষা কারিকুলাম হালনাগাদ ও মাঠের চাহিদানুযায়ী নতুন নতুন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে দেখে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। অবহেলিত হাওর ও চর অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।
গতকাল রোববার বিকাল পৌনে ৩টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ বছর পূর্তি উদযাপন এবং হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। কৃষিতে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে দুর্যোগসহনশীল বিভিন্ন জাতের ফসল উদ্ভাবন করতে হবে। হাওর এলাকায় বছরে শুধু বোরো ধানের চাষ করা হয়। অনেক সময় আগাম বন্যার কারণে সে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বোরো ধানের উৎপাদনকাল কমিয়ে আনা গেলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ ছাড়া কৃষি সাফল্য ধরে রাখতে কৃষক ও উৎপাদনকারী পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন রাষ্ট্রপ্রধান।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মাঠে প্রস্তুতকৃত প্যান্ডেল ও মঞ্চে ভয়বহ আগুন লাগা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি বাকৃবি আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসতে সম্মত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ বছর পূর্তি উদযাপন এবং হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করতে আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিকাল ৪টার দিকে মো. আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ারের পাশে নির্ধারিত স্থানে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বাকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষিবিদ মো. আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আবদুল মান্নান ও নির্বাহী সম্পাদক কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এমএ সাত্তার মণ্ডল এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। বিকাল ৫টার দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪ হাজার গ্র্যাজুয়েটসহ তাদের পরিবারবর্গ অংশ নেন।
অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে ৩ কমিটি
এদিকে, বাকৃবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান মঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে ৩টি কমিটি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এসব তদন্ত কমিটি গঠন করে। শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জরুরি বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নাল আবেদীন মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আকবর জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইয়াহিয়া খন্দকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাইরুজ্জামানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূইয়াকে প্রধান করে পুলিশ প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বরে নির্মিত বিশাল মঞ্চে গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ময়মনসিংহ ও ত্রিশাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে প্যান্ডেল ও মঞ্চ পুড়ে যায়।