• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
শিক্ষার্থীরা দাবির যা যা পেয়েছে

প্রধানমন্ত্রী নীহত শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ করেন

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

শিক্ষার্থীরা দাবির যা যা পেয়েছে

আজ রমিজউদ্দিন কলেজকে ৫টি বাস দেবেন প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ আগস্ট ২০১৮

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় টানা পাঁচ দিন সড়কে বিক্ষোভ করে নিজেদের দাবি পূরণের আশ্বাস অনেকটাই আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। তাদের ৯ দফা দাবির অনেকগুলো সরাসরি মেনে নেওয়া ও বাস্তবায়ন শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। দু-একটা দাবি পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়ার ইঙ্গিতও মিলেছে। আইএসপিআর জানিয়েছে, আজ শনিবার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রতিশ্রুত পাঁচটি বাস দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় জাবালে নূরের দুই বাসের রেষারেষিতে চাকায় পিষ্ট হয়ে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত ও কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়। এরপরই তাদের ক্ষুব্ধ সহপাঠীরা সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এ নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের এক বক্তব্যের পর ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে নামে। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে যায় এই বিক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান ও চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষাসহ নানা অনিয়মের তদারকিতে আটকা পড়েন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশ সদস্যসহ সরকারি অনেক কর্মকর্তা। স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলন থেকে ৯টি দাবি উঠে আসে শিক্ষার্থীদের স্লোগানে।

বিক্ষোভ শুরুর পরদিন থেকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি; শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আরো জোরদার হয়। সরকার গত বৃহস্পতিবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেও শিক্ষার্থীদের সড়কে নামা আটকাতে পারেনি। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে ডেকে নেন নিহত দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবের পরিবারকে। তাদের ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি সড়কে নিরাপত্তায় নানা নির্দেশনার কথা তুলে ধরেন। পরে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পর আন্দোলন অযৌক্তিক হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবি ও সরকারের আশ্বাস-

১. বেপরোয়া চালকের ফাঁসির দণ্ড এবং তা সংবিধানে সংযোজন। পদক্ষেপ : দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া ওই বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে জাবালে নূর পরিবহনের মালিক ও জড়িত অন্য বাসের চালক-সহকারীদের। মামলায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সঙ্গে অপরাধজনিত হত্যার ধারা যুক্ত করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, দ্রুত বিচার করে দোষীদের সাজা দেওয়া হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য অবহেলাকারী চালকের শাস্তির মাত্রা বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নে গতি এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে নতুন আইন শিগগিরই সংসদে উপস্থাপন করা হবে।’

২. নৌপরিবহনমন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি। পদক্ষেপ : নিজের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য’ দুঃখ প্রকাশ করে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। নিহত দিয়া খানম মিমের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের কাছেও ক্ষমা চেয়ে এসেছেন তিনি।

৩. এমইএসে ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। পদক্ষেপ : যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কলেজছাত্রী নিহত হয়েছে, সেখানে আন্ডারপাস অথবা ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। রমিজউদ্দিন স্কুল ও কলেজকে ৫টি বাস দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে। পদক্ষেপ : দিয়া ও করিমের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী সব স্কুলের সামনে গতিরোধক স্থাপনের নির্দেশ দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘কোনো স্কুল-কলেজের পাশে রাস্তা থাকলে সেখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করবে।’

৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। পদক্ষেপ : নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিমের পরিবারকে ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আহত শিক্ষার্থীদের ব্যয়ভার গ্রহণের কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে। পদক্ষেপ : সরাসরি বলা হয়নি, তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় এই দাবি বাস্তবায়নের ইঙ্গিত রয়েছে।

৭. শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পদক্ষেপ : এটার কথাও সরাসরি বলা হয়নি, তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় এই দাবি বাস্তবায়নের ইঙ্গিত রয়েছে।

৮. রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে।

পদক্ষেপ : এটা আইনতই নিষিদ্ধ। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর ঢাকার সড়কে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে বিআরটিএকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। জাবালে নূর পরিবহনের বাস দুটির নিবন্ধনও বাতিল করে বিআরটিএ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি যাতে রাস্তায় উঠতে না পারে, সেজন্য গাড়ির যাত্রার পয়েন্টে অর্থাৎ টার্মিনালে চেকপোস্ট বসিয়ে দেব, যাতে গাড়িটি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই ধরা পড়ে যে গাড়ির ফিটনেস আছে কি না, রেজিস্ট্রেশন ও চালকের লাইসেন্স সঠিক আছে কি না। তারপরও চালক গাড়িটি নিয়ে বের হলে আমরা সে ব্যবস্থাও নিচ্ছি।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র যাচাইয়ের কাজ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পর সরকারি গাড়িচালকদের যাবতীয় মূল কাগজপত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। পুলিশ সদস্যদেরও একই নির্দেশ দেওয়া হয়।

৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না। পদক্ষেপ : সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সহজ হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দু-একটি দাবি পূরণে সময় চেয়ে বলেছেন, ‘দু-একটি দাবি পূরণে সময় লাগবে, যেমন ফুটওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads