• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
রাজপথে শিক্ষার্থী-শ্রমিক

ধানমন্ডিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় আহত একজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে সহপাঠীরা

ছবি -বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

রাজপথে শিক্ষার্থী-শ্রমিক

পর্যবেক্ষণে মাঠে আওয়ামী লীগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ আগস্ট ২০১৮

নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে গত তিন দিন ধরে অঘোষিত ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন মালিকরা। এবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে নেমেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাস্তায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও।

অন্যান্য দিনের মতো গতকাল রোববার রাজপথে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ততটা উপস্থিতি না থাকলেও সকাল থেকেই অবস্থানে ছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের উপিস্থিতি লক্ষ করা যায়। নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায়ও সড়কে অবস্থান নেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় তারা বিভিন্ন যানবাহন আটকে দেন। কিছু কিছু জায়গায় শিক্ষার্থীদের মারধরও করেন তারা।

এদিন সকাল থেকেই ঢাকার মিরপুর ১ নম্বর সেকশনে কয়েক শ পরিবহন শ্রমিক অবস্থান নেন। আগের দিন শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হলেও এদিন দৃশ্য ছিল অন্যরকম। সাঁজোয়া যান নিয়ে পুলিশ প্রস্তুত থাকায় শিক্ষার্থীরা এদিন বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি। তাই বেশিরভাগ সময়ই সড়ক ছিল শ্রমিক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দখলে। ওদিকে গত শনিবার শনিরআখড়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর শ্রমিকদের হামলার পর রোববার সতর্ক ছিল পুলিশ। তাই বিক্ষিপ্ত দু-একটি হামলার ঘটনা ছাড়া শিক্ষার্থীদের ওপর তেমন কোনো হামলা বা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

রাজধানীর ধানমন্ডি, মিরপুর, ফার্মগেট, উত্তরা, বাড্ডা এলাকায় দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ে। মিরপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর ও স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে সকাল ১০টার দিকে সনি প্রেক্ষাগৃহের সামনে জড়ো হন আওয়ামী লীগ নেতারা। দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হক হ্যাপি বলেন, ‘সাধারণ ছাত্রদের যে প্রতিবাদ, তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের সব দাবি তিনি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তারপরও শিক্ষাঙ্গনকে অশান্ত করার জন্য যারা রাজপথে অরাজকতা করছে, দেশে অরাজকতা করছে, তাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।’

ফার্মগেটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সড়কের দুই পাশে চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। বাড্ডায় মিছিল করেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ঘিরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব ও নীলক্ষেত এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে রাজপথ দখলে রাখে ছাত্রলীগ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে এদিন রাজধানীর কিছু স্থানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে নামেন। শাহবাগ, ধানমন্ডি, রামপুরা ও উত্তরায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নামেন। আসাদ গেট, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার সড়কে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। রামপুরা, বনানী ও কুড়িলে সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তায় নামেন। প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের দিক থেকে মিছিল নিয়ে সড়কের মাঝে এসে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। এরপর আজমপুরের দিক থেকে আরো একটি মিছিল এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ছিলেন ইউনিফর্ম পরা। আন্দোলনের মধ্যে নাশকতা ঘটাতে অন্য পক্ষ ঢুকছে বলে পুলিশের হুশিয়ারির প্রেক্ষাপটে পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে বিক্ষোভে যোগ দিতে দেননি শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ছবি তুলতে ও ভিডিও ধারণে বাধা দেন। বনানীতেও শিক্ষার্থীরা ছবি তুলতে বাধা দেন সাংবাদিকদের।

কুড়িলে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। শাহবাগে সকালে একদল শিক্ষার্থী অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শান্তিনগর, কাকরাইল, মৌচাক, মালিবাগ মোড়, পল্টন এলাকায় দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নামতে দেখা যায়নি।

চট্টগ্রামে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের : ঢাকায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভে নামা শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঢাকার আন্দোলন থেকে ওঠা ৯ দফার সঙ্গে চট্টগ্রামের জন্য কিছু দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসক তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ার পর তারা সোমবার থেকে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত জানান।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা গেলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরদিন থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিলে অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর সড়ক। নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা সাত দিন ধরে সড়কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।শ্রমিক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads