• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে না পারলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জবাব দিতে হবে

সড়ক নিরাপত্তাসহ নানা দাবিতে আন্দোলনরত স্কুলের শিক্ষার্থীরা

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে না পারলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জবাব দিতে হবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ আগস্ট ২০১৮

সড়ক নিরাপত্তাসহ নানা দাবিতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা গত আট দিন ধরে আন্দোলন করছে। এ কারণে স্কুলও বন্ধ রয়েছে। সবাই বলছেন, আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিজয় হয়েছে। এবার ঘরে ফিরে যাও। কিন্তু কেউ শুনছে না কথা। এরকম পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার বিকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঢাকার স্কুল এবং কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট বন্ধ করা, উসকানি দেওয়া শিক্ষকদের চিহ্নিত করা এবং পরিবহন শ্রমিকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করানোর পরামর্শ দিয়েছেন স্কুল ও কলেজপ্রধানরা। এর জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার্থীরা আজ থেকে আন্দোলনে নামলে তার দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নিতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে হবে। প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ হয়ে যদি শিক্ষার্থীদের বোঝাতে না পারেন তাহলে প্রধান হয়েছেন কেন? কাজেই এখন আপনাদের নেতৃত্বের পরীক্ষা চলছে। ‘শিক্ষার্থীদের অবশ্যই শিক্ষকদের কথা শুনতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মিথ্যা গুজবে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কোনো কোনো মহল এর সুবিধা নিতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের এখন ক্লাসে ফিরতে হবে, ঘরে ফিরতে হবে। তাদের দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। তার বাস্তবায়নে কাজ চলছে।

রাজধানীর কাকরাইলের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে মন্ত্রীর এই জরুরি বৈঠকটি  বেলা ৩টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে ৪টা ৫৫ মিনিটে শেষ হয়। এরপর শুরু হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে। এ দুই বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর মো. মাহাবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিন শতাধিক অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এবং প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

সভার শুরুতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ছাত্ররা যেন কোনো অবস্থাতেই রাস্তায় নামতে না পারে সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের ভূমিকা রাখতে হবে। আজ থেকে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কোনো শিক্ষার্থী যেন রাজপথে না নামে। এরপর তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পরামর্শ শুনতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মুক্ত আলোচনা শুরুর নির্দেশ দেন।

মুক্ত আলোচনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় থাকা সবাই শিক্ষার্থী কি না, আন্দোলনের অষ্টম দিনে এসে সেই প্রশ্ন তুলে কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে অভিভাবকদের নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর পরিচালনা পর্যদের সভাপতিকে ভূমিকা রাখতে হবে।

ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি এলাকায় ‘শান্তি শিবিরের’ ব্যবস্থা করার পরামর্শ রাখেন। ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মারুফী খান কিছুদিন ফেসবুক বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন। সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরি করেও অনেক শিক্ষক ফেসবুকে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় নয় দাবি করে পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। হাজী মকবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধকে একটা খেলা হিসেবে নিয়েছে, কারণ কলেজও কিছু বলছে না, কেউ কিছু বলছে না। শিক্ষার্থীরা যেখানে যেখানে আন্দোলন করছে সেখানে গিয়ে তাদের কনভিন্স করা যেতে পারে। আমরা দাঁড়ালে কোনো শক্তিই আর কাজ করবে না, এ বিষয়ে আমরা অনুমতি চাই। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষক কানিজ মাহমুদ আক্তার বলেন, অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের যেন ঝামেলা না হয় সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

ঢাকা কমার্স কলেজের শফিকুল ইসলাম আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের আলাদা করে ডেকে কাউন্সেলিং করার পরামর্শ দেন। এ কে এম রহমতুল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ পরিবহন শ্রমিকরা যেন শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করেন সে বিষয়ে তাদের কাউন্সেলিং দেওয়ার পরামর্শ দেন। যেসব শিক্ষার্থী কলেজে অনুপস্থিত থাকছে তাদের অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিয়ে ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান খান অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের সময় শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার দাবিও জানান। নজরুল শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা জাহান বলেন, যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হবে না তাদের চিহ্নিত করতে হবে। নতুন পোশাকে সবাই ছাত্র কি না তাও সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত। স্কুল-কলেজের পোশাকে আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সবাই শিক্ষার্থী নয় বলে কয়েকজন অধ্যক্ষ তাদের সন্দেহের কথা আলোচনায় তুলে ধরেন।

প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে ৭০ জন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধান বক্তৃতায় বলেছেন, স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ফেরাতে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যদের সভাপতিকে ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ডেকে কথা বলারও পরামর্শ রয়েছে তাদের। এ ছাড়া এসএমএসের মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করা, শিক্ষার্থীদের বোঝাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানান কোনো কোনো অধ্যক্ষ।

দীর্ঘ বক্তব্য শোনার পর দু’দফায় ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বললেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সফল ও বিজয় হয়েছে। এখন এই বিজয় ধরে রাখার জন্যই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত। কারণ এখন গুজব রটিয়ে তাদের বিপথগামী করা হবে। তাতে সব অর্জন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সঙ্কট হতে পারে। কোনোভাবেই যদি শিক্ষার্থীদের টেনে রাস্তায় রেখে দেওয়া যায়, তাহলে তাদের সফলতা বিনষ্ট হবে।

উল্লেখ্য, রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর নয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববারও অষ্টম দিনের মতো রাজধানীতে আন্দোলন হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এ সভার আয়োজন করা হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads