• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সংঘর্ষ ছড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গ্রামীণফোন অফিসের সামনে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে

ছবি - বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

সংঘর্ষ ছড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে

শাহবাগ, রামপুরা, বসুন্ধরায় শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ # বেসরকারি দুই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ আগস্ট ২০১৮

রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের গতকাল সোমবার রাজপথে দেখা যায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সড়কে অবস্থান নেওয়া সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর শাহবাগ, রামপুরা-আফতাবনগর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এসব সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত ও আটক হয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইস্ট-ওয়েস্ট ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নর্থসাউথের প্রক্টর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিলেও এ বিষয়ে কোনো নোটিশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

গত শনি ও রোববার ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দিনভর বিক্ষোভ মিছিল করেন ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী। দুপুর ১২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল শুরুর পর মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন, কার্জন হল, বুয়েট ঘুরে টিএসসি হয়ে বেলা ৩টার দিকে তারা শাহবাগের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের আটকে দিলে বাকবিতণ্ডা এবং ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করেন। এরপর পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছোড়া ও লাঠিপেটা করে।

প্রায় ২০ মিনিটের এই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে দুই আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ। এরপর পুলিশ চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে টিএসসিতে চলে যান। সংঘর্ষকালে ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানান মিছিলকারীরা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইটের আঘাতে তাদের এক সদস্য আহত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক যুবক শাহবাগ মোড়ে এসে রাস্তা বন্ধ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়।’ দুই শিক্ষার্থীকে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাচাই-বাছাই করে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে রামপুরা ও আফতাবনগরে বেসরকারি ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। বেলা পৌনে ১১টা থেকে এই সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, হামলার শিকার হয়েছেন এক সংবাদকর্মী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে মেরুল বাড্ডার দিক থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। লাঠি হাতে যুববকদের মধ্যে বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়। তারা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ও পথচারীদের ওপর চড়াও হয়। স্কুলের পোশাক পরিহিত দুজনকে এ সময় পেটায় তারা।

একপর্যায়ে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরাও সেখানে অবস্থান নেন। তারা শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বললে তারা না গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভেতরে চলে যায়। লাঠি হাতে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া যুবকরা তখনো ইউনিভার্সিটির দিকে ঢিল ছুড়ছিল। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক নাসরিন আক্তার সুমির ওপর চড়াও হয় এক দল যুবক। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা। পরে তাকে বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে পুলিশ সদস্যরাও হেনস্থা করে।

এ সময় ওই রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল ৫টার দিকে পুলিশ সদস্যরা মাইকে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। পরে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত ও অনেককে আটক করা হয়। গুলশান বিভাগের এডিসি আবদুল আহাদ বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা করার কারণে অনেককে আটক করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তাদের সবাইকে থানায় পাঠানো হয়েছে।’ এ ঘটনায় আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররাও ক্যাম্পাসের ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। প্রগতি সরণিতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান ফটকের সামনে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। বেলা ৩টার দিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা আবাসিক এলাকার ভেতরে চলে যান। পুলিশ ভেতরে গিয়েই ছাত্রদের বেধড়ক পেটায়। ছাত্ররা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে ২০ ছাত্র আহত হন। ছাত্রদের ইটপাটকেলে কমপক্ষে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে গুলশান জোনের উপকমিশনার মোসতাক আহমেদ মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরাই পুলিশের ওপর চড়াও হয়। আমরা সড়ক স্বাভাবিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়।’ তিনি বলেন, ‘৯ দফা দাবি প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছেন। এখন ছাত্রদের উচিত ঘরে ফিরে যাওয়া।’ উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ওদিকে ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ইংরেজি ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads