• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
ইলিশের উৎপাদন আট বছরে দ্বিগুণ

জাটকা সংরক্ষণ, বিকল্প কর্মসংস্থান ও গবেষণা শীর্ষক প্রকল্পের সুবাদে ২০০৭ সালে ১ কোটি ৪৪ লাখ মা ইলিশ রক্ষা পেয়েছে

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

আইএমইডির প্রতিবেদন

ইলিশের উৎপাদন আট বছরে দ্বিগুণ

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০১৮

অবহেলা আর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের জলসীমায় ২০০২-০৩ অর্থবছর প্রথমবারের মতো ইলিশের আহরণ প্রায় ১০ শতাংশ কমে আসে। এরপর থেকে বাড়ছে এ মাছের আহরণ। তবে বাংলাদেশের জাতীয় এ মাছের উৎপাদনে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যায় ২০০৭ সাল থেকে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ৯০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার টনে। আট বছরের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। মা মাছ সংরক্ষণ আর কিশোর মাছ (জাটকা) শিকার নিরুৎসাহিত করতে সরকারি প্রকল্পের কারণে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে দাবি করা হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, জাটকা সংরক্ষণ, বিকল্প কর্মসংস্থান ও গবেষণা শীর্ষক প্রকল্পের সুবাদে ২০০৭ সালে ১ কোটি ৪৪ লাখ মা ইলিশ রক্ষা পেয়েছে। এর ফলে ইলিশের ডিম উৎপাদন হয়েছে ৪৬ হাজার ৮০০ কেজি। এর পর থেকে প্রতিবছর দেড় কোটির বেশি মা মাছ রক্ষা করতে ভূমিকা রেখেছে প্রকল্পটি। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ইলিশের ডিম উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭২০ কেজি। মা মাছ রক্ষার পাশাপাশি জাটকা সংরক্ষণের কারণে ইলিশ হারিয়ে গিয়েছিল এমন এলাকায় ইলিশের দেখা মিলছে। কয়েক বছর ধরে আবার রাজশাহীতে পাওয়া যাচ্ছে রুপালি ইলিশ। মৌলভীবাজারের হাওরে ইলিশ পাওয়ায় জেলেদের চোখেমুখেও দেখা যাচ্ছে খুশির ঝিলিক।

আইএমইডি সূত্র জানায়, ২২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০০৮ সাল থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে আসছে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুইবার সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। সর্বশেষ সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় উন্নীত হয়েছে ৪০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। এর বাইরে ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রকল্পের আওতায় ইলিশ রক্ষায় গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়া প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়ন করতে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালায় আইএমইডি। সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশে ইলিশ অধ্যুষিত ১২ জেলার ৫১ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ হয়েছে। এর আওতায় ইলিশ আহরণে সংশ্লিষ্ট ৩২ হাজার ৫০৯ জেলেকে জাটকা শিকারের মৌসুমে বিকল্প কর্মসস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে ইলিশ ও জাটকার জন্য। এর সুফল হাতেনাতে পাওয়া গেছে বলে দাবি আইএমইডির।

প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের সাত বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৯৬ হাজার টন। বৃদ্ধির এ হার পরবর্তী তিন বছর ধরে অব্যাহত আছে। জনসচেতনতা বেড়ে যাওয়ায় জাটকা আহরণ কমেছে। প্রকল্পের সুফল পাওয়া ৪৩ শতাংশ পরিবারের আয় বেড়েছে। এসব পরিবারের সঞ্চয় বেড়েছে ৭ গুণের বেশি। সংশ্লিষ্ট এলাকার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ এখন ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় বিষয়ে সচেতন। তবে ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক সাফল্য পাওয়া প্রকল্পটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমইডি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট ২২টি জেলায় ইলিশের বিচরণ থাকলেও শুরুতে চার জেলায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। অবশ্য শেষ দুই বছরে অবশিষ্ট জেলাগুলো প্রকল্পের আওতায় আসে। লোনা পানিতে কোনো কার্যক্রম না থাকায় প্রত্যাশিত সুফল আসেনি এ প্রকল্প থেকে। এ ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানে উপকরণ নির্বাচনে সুবিধাভোগীদের প্রয়োজন ও মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।

প্রকল্পটির আওতায় জাটকা রক্ষায় জেলেদের নিরুৎসাহ করতে ভিজিএফ-এর আওতায় চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম বন্ধ হলে ভবিষ্যতে জাটকা শিকারের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করে আইএমইডি। এ অবস্থায় জাটকা সংরক্ষণে পর্যাপ্ত পরিদর্শন ও অভিযান পরিচালনা করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads