• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
রমার জবানে হত্যাকাণ্ড

ঘাতকদের মেশিনগানের মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অকুতোভয়

রাকিব আর্ট

জাতীয়

রমার জবানে হত্যাকাণ্ড

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ আগস্ট ২০১৮

পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট ভোর ৫টায় যখন বঙ্গবন্ধু নিহত হন, তখন সেখানেই ছিলেন রমা নামের গৃহকর্মী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি বলেন—ঘটনার দিন রাতে আমি এবং অপর কাজের ছেলে সেলিম দোতলায় বঙ্গবন্ধুর বেডরুমের সামনে বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোরের দিকে হঠাৎ বেগম মুজিব দরজা খুলে বাইরে আসেন এবং বলেন, সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। তিনতলায় শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামাল ঘুমিয়েছিলেন। শেখ জামাল ও তার স্ত্রী রোজী এবং বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের ঘুমিয়েছিলেন দোতলায়। বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব এবং শেখ রাসেল দোতলায় একই রুমে ঘুমিয়েছিলেন। বাড়ির নিচতলায় পিএ মুহিতুল ইসলামসহ অন্যরা ডিউটিতে ছিলেন। বেগম মুজিবের কথা শুনে তাড়াতাড়ি লেকের পাড়ে গিয়ে দেখি, কিছু আর্মি গুলি করতে করতে আমাদের বাড়ির দিকে আসছে। আবার বাসায় ঢুকে দেখি রিসেপশন রুমে পিএ মুহিতুলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কথা বলছেন। পেছনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় গিয়ে দেখি বেগম মুজিব ছোটাছুটি করছেন।

তিনতলায় গিয়ে কামাল ভাইকে ওঠাই। তাকে বলি, আমাদের বাসায় আর্মিরা আক্রমণ করেছে। কামাল ভাই তাড়াতাড়ি শার্ট-প্যান্ট পরে নিচে নেমে যান। একপর্যায়ে কামাল ভাইয়ের চিৎকার শুনতে পাই।

তারপর বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে আবার বাইরে এলে আর্মিরা তাঁর বেডরুমের সামনে তাঁকে ঘিরে ফেলে। আর্মিদের লক্ষ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। সিঁড়ির দু-তিন ধাপ নামার পরে নিচের দিক থেকে ক’জন আর্মি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন। আমি তখন আর্মিদের পেছনে ছিলাম। খুনিরা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কী করো? উত্তরে আমি বলি, বাসায় কাজ করি। তারা আমাকে ভেতরে যেতে বলে। এরপর আর্মিরা দোতলায় আসে এবং দরজা পেটাতে থাকলে বেগম মুজিব দরজা খুলে দেন।

আর্মিরা রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং শেখ নাসের, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব এবং আমাকে নিচের দিকে নিয়ে যায়। একটু পরেই গুলির শব্দসহ মেয়েদের আর্তচিৎকার শুনতে পাই। আর্মিরা শেখ নাসের, রাসেল ও আমাকে নিচতলায় এনে লাইনে দাঁড় করায়। সেখানে সাদা পোশাকে এক পুলিশের লাশ দেখতে পাই। নিচে শেখ নাসেরকে লক্ষ্য করে আর্মিরা জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কে?’ পরিচয় দিলে তাকে নিচতলায় বাথরুমে নিয়ে যায়। একটু পরে গুলির শব্দ ‘ও মাগো’ বলে চিৎকার শুনতে পাই।

এ সময় এক আর্মি শেখ রাসেলকে বলে, ‘চল, তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাই।’ তাকেও দোতলায় নিয়ে যায়। একটু পরেই আর্তচিৎকার ও গুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর দেখলাম কালো পোশাক পরা আর্মিরা আমাদের বাসার সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও পিএ মুহিতুল ইসলামকে আহত অবস্থায় দেখি। এরপর আমাদের বাসার সামনে একটি ট্যাঙ্ক আসে। ট্যাঙ্ক থেকে কয়েকজন আর্মি নেমে বাড়ির ভেতরের আর্মিদের লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করে, ভেতরে কে আছে? উত্তরে ভেতরের আর্মিরা বলল, ‘অল আর ফিনিশড।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads