• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ট্রাফিক সপ্তাহে আইন প্রয়োগে গাফিলতি

ট্রাফিক সপ্তাহে মামলা ও জরিমানার হার প্রায় দিগুণ বেড়েছে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ট্রাফিক সপ্তাহে আইন প্রয়োগে গাফিলতি

মামলা জরিমানার হার দ্বিগুণ

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ১৫ আগস্ট ২০১৮

বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় ট্রাফিক সপ্তাহে মামলা ও জরিমানার হার প্রায় দিগুণ বেড়েছে। মূলত নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইন প্রয়োগে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ কঠোর অবস্থানে থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বছরের অন্যান্য সময়েও ট্রাফিক বিভাগ আইন প্রয়োগে গাফিলতি না করে তৎপর থাকলে সড়কের দৃশ্য অনেকটাই পাল্টে যেত বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার দিন থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে ছাত্রছাত্রীরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আন্দোলন চলাকালে ৬ দিনে রাজধানীতে ট্রাফিক আইন অমান্য করার দায়ে মোট মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৫টি। আর জরিমানা করা হয় ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৩ টাকা। অপরদিকে ৫ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত পালিত হওয়া পুলিশ সপ্তাহের ৬ দিনে (৯ আগস্টের তথ্য পাওয়া যায়নি) রাজধানীতে দিনে গড়ে ৮ হাজার ৬৪৫টি মামলা হয়েছে। এই সময়ে ট্রাফিক আইন অমান্যের দায়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ মোট ৫১ হাজার ৮৬৮ মামলার বিপরীতে জরিমানা আদায় করেছে ২ কোটি ৬৯ লাখ ২১ হাজার ৮৭২ টাকা, যা দৈনিক গড় হিসেবে দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ লাখ টাকা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তীকালে ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশের আইন প্রয়োগ চিত্র এমন হলেও বছরের অন্যান্য সাধারণ দিনের অবস্থা অনেকটাই ভিন্ন। গত জুলাই মাসের প্রাপ্ত ২৫ দিনের তথ্যে দেখা যায়, ওই সময়ে ট্রাফিক আইন অমান্যের দায়ে মোট ৯৪ হাজার ৩৪১টি মামলা দায়ের করেছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ, যার দৈনিক গড় ৩ হাজার ৭৭৪। আর পুরো মাসে জরিমানা আদায় করেছে দৈনিক ১৮ লাখ ৬ হাজার টাকা গড়ে মোট ৪ কোটি ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩১ টাকা।

মামলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, সড়কে ট্রাফিক আইন অমান্যের বিভিন্ন যানবাহনের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাস ও মিনিবাস। জুলাই মাসের মামলার বিবরণী থেকে দেখা যায়, আইন অমান্য করে উল্টোপথে চলাচলের দায়ে পুরো মাসে মামলা হয়েছে ৫ হাজার ৮১২টি, যার অধিকাংশই মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। উল্টোপথে চলাচলসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির বৈধ নিবন্ধন না থাকা এবং হেলমেট ব্যবহার না করার দায়ে ২২ হাজার মোটরসাইকেল চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আর আন্দোলন ও ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালীন ১২ দিনে এই সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৯টি।

পুরো জুলাইয়ে ট্রাফিক আইন অমান্যে দায়ের মোট ১০ হাজার ৭১৯টি বাস ও মিনিবাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একই সময় ডাম্পিং করা হয় ৬১৭টি যানবাহন ও রেকার লাগিয়ে জরিমানা করা হয় ১৬ হাজার ৮৭৬টিকে। ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম ছয় দিনে ৬ হাজার ৭৭৬টি বাস-মিনিবাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ৬ দিনে মামলা হয় মাত্র ১ হাজার ৮৭০টি বাস ও মিনিবাসের বিরুদ্ধে। আন্দোলনের সময়ে নিরাপত্তার অজুহাতে চলা পরিবহন মালিক সমিতির ধর্মঘট ও পুলিশ সপ্তাহের কারণে সড়কের গণপরিবহনের সঙ্কটের চিত্রটিও এ থেকে স্পষ্ট হয়।

ট্রাফিক সপ্তাহ ও অন্যান্য সাধারণ দিনের এমন পরিসংখ্যানে পুলিশের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরই) পরিচালক অধ্যাপক মো. মাহবুব আলম তালুকদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ট্রাফিক সপ্তাহ চলা অবস্থায় সড়কে আইন অমান্যের প্রবণতা কমে যায়। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণেই এমনটি হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রবণতা কমলেও এ সময়েই ট্রাফিক আইন অমান্যের দায়ে মামলা হচ্ছে অন্যান্য দিনের তুলনায় দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি। এ থেকে অন্যান্য দিনে সড়কে আইন প্রয়োগে পুলিশের দায়িত্বহীনতার চিত্র স্পষ্ট বোঝা যায়।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের জনবলের ঘাটতি আছে এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি আইন প্রয়োগেও তাদের গাফিলতি রয়েছে সেটাও এবারের ট্রাফিক সপ্তাহে স্পষ্ট হয়েছে।’

এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও গবেষণা) গোবিন্দ চন্দ্র পাল বলেন, ‘ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে আমাদের বিশেষ কর্মসূচি চলায় অন্যান্য সাধারণ দিনের তুলনায় আইন প্রয়োগের ব্যাপারে কিছুটা কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি উপলক্ষে অতিরিক্ত জনবল দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও আমাদের সহযোগিতা করছেন। যার ফলে ট্রাফিক মনিটরিংটা ভালোভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। এটা সত্য, ট্রাফিক সপ্তাহের দিনগুলোতে মামলার সংখ্যা বেশি হলেও অন্যান্য দিনের তুলনায় আইন অমান্যের সংখ্যা কমই হবে। তবে অন্যান্য দিন ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনের অবহেলার যে অভিযোগ রয়েছে সেটা সত্য নয়। অন্যান্য দিনে সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। সেখানে ট্রাফিক সপ্তাহে একজন সদস্য দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টাও দায়িত্ব পালন করছে। এখন যে পরিমাণ জনবল দায়িত্ব পালন করছে সারা বছর একই সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত থাকলে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা শৃঙ্খলায় চলে আসবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads