• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নাগরিকত্ব ইস্যু উপেক্ষা

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে নিজেদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রাখাইন

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে পরামর্শক প্যানেলের সুপারিশ জমা

নাগরিকত্ব ইস্যু উপেক্ষা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ আগস্ট ২০১৮

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে নিজেদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রাখাইন পরামর্শক প্যানেল। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন তারা। স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়ার অভিযোগে একাধিক সদস্য পদত্যাগ করায় প্যানেলটি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। এদিকে দুটি প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে কয়েক হাজার নিহতের তথ্য উঠে এসেছে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের নেতৃত্বাধীন পরামর্শক প্যানেল তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য তারা এই সুপারিশ করে। তবে এতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি।

পরামর্শক প্যানেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন থাইল্যান্ডের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরাকিয়ার্ত সাথিরাথাই। সুপারিশমালা সরকার ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য ইউ উইন মারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্যানেলের দেওয়া সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ বাস্তবায়ন শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। তা হচ্ছে, উত্তর রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন। আমি মনে করি, এটা তদন্ত কমিশন প্যানেলের সবচেয়ে বড় অর্জন।’

তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপে মাথা নত করতে রাজি নয়। তবে আমি আশা করছি, আমরা দুই দফা সুপারিশ করেছি সেগুলো সময়মতো সবাই মেনে নেবে।’ প্যানেলের পরামর্শের মধ্যে রয়েছে- একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, যা জাতীয় উদ্যোগে গঠিত হবে এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত পরিচালনা করবে। প্যানেলের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, সহিংসতা-কবলিত এলাকায় সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের অনুমতি ও রাখাইনের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি করা। উইন মারা জানান, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের সমঝোতা স্মারক প্রমাণ করে যে, সু চি সরকার তাদের পরামর্শ গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে।

গত বছর ডিসেম্বরে এই পরামর্শক প্যানেল গঠন করা হয়। মূলত রাখাইনের সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়ার জন্য এটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই বিতর্কের মুখে পড়ে এই প্যানেল। শুরুতেই ৫ সদস্যের প্যানেল থেকে মার্কিন রাজনীতিক বিল রিচার্ডসন পদত্যাগ করলে ক্রমেই গ্রহণযোগ্যতা হারাতে থাকে মিয়ানমার সরকারের গঠিত আন্তর্জাতিক প্যানেল ‘কমিটি ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য রিকোমেনডেশন অন রাখাইন স্টেট’। পরে জুলাই মাসে প্যানেলটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করা সাবেক থাই কূটনীতিক কবসাক চুটিকুলও পদত্যাগ করেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ওই সময় জানায়, কমিটির বিদেশি সদস্যদের স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ দিচ্ছে না মিয়ানমার।

নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার : রাখাইনে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়াদের তালিকা প্রণয়ন করেছেন একদল রোহিঙ্গা। ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তার আওতায় তালিকা প্রণয়ন করেছেন তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়া ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার নাম অন্তর্ভুক্ত। তবে সংগঠনটি জানিয়েছে, হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি তারা। এই তালিকা নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি মিয়ানমার সরকার।

এদিকে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে শুরু হওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো জঘন্যতম ওই নৃশংসতায় প্রায় ২৪ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন বলে এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। গত বুধবার প্রকাশ করা ওই প্রতিবেদনে অভিযানকালে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও উঠে এসেছে।

রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে প্রকাশিত ‘ফোর্সড মাইগ্রেশন অব রোহিঙ্গা: দ্য আনটোল্ড এক্সপেরিয়েন্স (জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা: অব্যক্ত অভিজ্ঞতা)’ বইয়ে ভয়াবহ এসব তথ্য উঠে এসেছে। লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট: বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক বিশেষ অধিবেশনে গবেষণা গ্রন্থটি উপস্থাপন করা হয়। বইটি প্রকাশ করেছে কানাডার অন্টারিওতে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ওআইডিএ)।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads