• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শেষ মুহূর্তে পশুর হাটে দরপতন

রাজধানীর কোরবানীর পশুর হাট

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

শেষ মুহূর্তে পশুর হাটে দরপতন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ আগস্ট ২০১৮

কোরবানিকে কেন্দ্র করে এবারে রাজধানীতে গবাদিপশুর হাট কয়েক দিন আগে থেকেই ছিল জমজমাট। উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছিল গরু ও ছাগল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গত মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকেই পশুর হাটগুলোতে কমতে শুরু করে ক্রেতা। বিকালে অনেক হাট হয়ে পড়ে ক্রেতাশূন্য। যদিও হাটগুলোতে তখনো পশুর কোনো কমতি ছিল না। এর ফলে কমতে শুরু করে পশুর দামও। ফলে আগের দিনের চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছিল কোরবানির পশু। এতে করে পশুর পর্যাপ্ত দাম পাননি অনেকে। দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ পশু না বেচে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। বেশি লাভের আশায় যারা শেষ মুহূর্তের জন্য পশু রেখে দিয়েছেন তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানি হাটের এই দরপতনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তাদের মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর একটু বেশি পশু পালন হয়েছে। কারণ গত ঈদের আগের দিন পশুর সঙ্কট দেখা দেয়। তাছাড়া এ বছর ১৫ আগস্ট ও ঈদ কাছাকাছি সময়ে পড়ে যায়। তাছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে তাই রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও যার যার এলাকায় এবার বেশি কোরবানি দেবেন। এ কারণে একটু চাহিদা বেশি থাকবে বলে তাদের ধারণা ছিল। এ চাহিদাকে কেন্দ্র করে ঈদবাজারে পশুর দাম বাড়বে। তখন বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাকে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঈদের আগে দেশে পর্যাপ্ত পশু মজুত রয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতীয় গরু না আসায় শেষ মুহূর্তে পশুর সঙ্কটে দাম আরো বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় অনেকেই সোমবার একটু বেশি দামেই গরু কিনে ফেলেছেন। কিন্তু সোমবার রাতে ঢাকার হাটগুলোতে নতুন করে প্রচুর গবাদিপশু আসায় দাম পড়ে যেতে শুরু করে।    

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রথম কয়েক দিন পশুর চাহিদা ছিল যথেষ্ট। তখন কোরবানিদাতাদের অনেকেই অপেক্ষাকৃত বেশি দামে পশু কিনেছেন। আরো বেশি দাম পাওয়ার আশায় অনেক ব্যবসায়ী তখন পশু বেচেননি। তাদের আশা ছিল, শেষ মুহূর্তে গবাদিপশুর সঙ্কট দেখা দেবে। তখন বেশি দাম পাওয়া যাবে।

তবে ব্যবসায়ীদের এই ‘ফাঁদ’ সরকার নজরে রাখে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এজন্য সীমান্তেও কড়াকড়ি ছিল না। ভারত ও মিয়ানমার থেকে পশু আসতে থাকে। ব্যবসায়ীদের মতে, এই ঈদকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১৬ থেকে ২০ লাখ পশু এসেছে দেশের বাইরে থেকে। এই অতিরিক্ত পশু যুক্ত হয় দেশের কোরবানির বাজারে। এ খবর পেয়ে যান ক্রেতারাও। ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর হাটে এসব গরু প্রবেশ করতে থাকে। এর পরেই শুরু হয় দরপতন। আগের দিন সোমবার (২০ আগস্ট) মাঝারি আকারের যে গরুর দাম ওঠে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পরদিন সেই গরুর দাম হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় বেশি দামের আশায় যারা শেষ মুহূর্তের জন্য পশু রেখে দেন তাদের মাথায় হাত পড়ে।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর মেরাদিয়া, আফতাবনগর, কমলাপুর ও গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটভর্তি পশু। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত এলাকা অতিক্রম করে আশপাশের অলিগলি ও খোলা জায়গায় পর্যন্ত হাট ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ পশু ছিল, সে পরিমাণ ক্রেতা চোখে পড়েনি। সকাল পেরিয়ে বিকালের দিকেও একই চিত্র বিরাজ করে। বিক্রেতারা পশু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও ক্রেতা উপস্থিতি ছিল খুবই কম, ফলে পশুর দামও কমে যায়।

গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে গাবতলী হাটে দেখা যায়, পশুর দাম আগের ক’দিনের তুলনায় অনেক কম। এ হাটে কুষ্টিয়ার ওমর বেপারি দুটি গরু নিয়ে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছেন। সোমবারও তার সাদা রংয়ের বড় আকৃতির গরুর দাম উঠেছিল ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাজারে দাম দেখে তিনি হাট থেকেই আরেকটি সাদা গরু কিনেছিলেন আড়াই লাখ টাকায়। বড় আকৃতির এই এক জোড়া গরু এখন ক্রেতারা ৩ লাখ টাকা দর বলছেন বলে জানান ওমর আলী। তিনি বলেন, গরু বিক্রি না হলে সকালে নিয়ে যাব। তবু এত কমে বিক্রি করব না।

মঙ্গলবার বিকালে কুষ্টিয়া থেকে আফতাবনগর পশুর হাটে আসা গরুর বেপারি আবদুল হালিম বলেন, যে গরু গত রোববার ৫০ হাজার টাকা দর উঠেছিল, সেটি আজকে সকালে ৪৫ হাজার টাকা দিতে চাইল, তারপর দুপুরে আরো কমে ৪০ হাজার টাকা বলছে।

তিনি বলেন, ৬ মাস আগে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে যে গরুটি তিনি কিনেছিলেন, সোমবারও হাটে ক্রেতারা ওই গরুর জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিতে চাইছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার দর পড়তে পড়তে দুপুরে ৮০ হাজার টাকার বেশি কেউ দিতে চাইছেন না। এবার ১৩টি গরু নিয়ে হাটে এসেছিলেন জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, এখনো দুইটা গরু বিক্রি বাকি। শেষবেলায় এসে বিপদে পড়ে গেলাম।

কমলাপুর হাটের পশু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঈদ ও ১৫ আগস্ট প্রায় সমসাময়িক সময়ে পড়ে যাওয়ায় চাহিদা একটু বেশি হয়েছে। ১৫ আগস্টেও অনেক গরু জবাই হয়েছে। এজন্য তারা শেষ মুহূর্তের জন্য পশু রেখে দিয়েছেন। ভালো দাম পেয়েও আরো বেশি দামের আশায় বিক্রি করেননি। শেষ মুহূর্তে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অনেক পশু এসেছে। সে কারণে দাম পড়ে গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads