• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
চামড়ার দরপতন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’

ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএ নেতাদের বৈঠক

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএ নেতাদের দাবি

চামড়ার দরপতন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’

কাঁচা চামড়ার দর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে ফলে চামড়া পাচার হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ আগস্ট ২০১৮

কোরবানির পশুর চামড়ার রেকর্ড দরপতনকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলছেন এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএ-এর নেতারা। তারা বলছেন, যেভাবে মিডিয়ায় বলা হয়েছে, গত তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন দাম- সেটি ঠিক নয়। কাঁচা চামড়ার দর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এই বিভ্রান্তির ফলে চামড়া পাচার হওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়ার দর নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির ওপর গতকাল শনিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিটিএ নেতারা। তারা আরো দাবি করেন, এবার মাত্র ৪২ ট্যানারিকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। এ অবস্থায় অনেক ট্যানারি মালিক আড়তদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি। অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে চাহিদা কম। এসব কারণে কাঁচা চামড়ার দাম কমে গেছে। তারা অভিযোগ করেন, ভুল তথ্য দিয়ে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি মালিকদের সাভার নেওয়া হয়েছে। সেখানে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা ‘মাঠে মারা গেছেন’।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, এবার পশুর চামড়ার নিয়ে সিন্ডিকেট চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত তিন দশকে সর্বনিম্ন দরে বেচাকেনা হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ন্যায্যমূল্য তো দূরের কথা, কোরবানি দিয়ে পশুর চামড়া অনুনয় করে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে। অবশ্য ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে পশুর চামড়ার দর বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর খাসির কাঁচা চামড়া সারা দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা ও বকরির ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিটিএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে, এটি পুরোপুরি ঠিক নয়। চামড়ার দরপতন বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পাড়া কিংবা মহল্লার কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের লোকজন জোর করে কম দামে চামড়া নিয়ে গেছে। তারা বেশি মুনাফার জন্য এমনটি করেছে। ট্যানারির মালিকরা নির্ধারিত মূল্যেই লবণযুক্ত চামড়া কিনবে। তবে কেউ চামড়ায় সঠিকভাবে লবণ না মেশালে সেই চামড়ার দাম পাবে না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ট্যানারি মালিকরা তা সংগ্রহ করবে। দরপতনের খবরে চামড়া পাচার হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেভাবে মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে যে, ত্রিশ বছরের মধ্যে দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এটি আসলে ঠিক নয়। এ মেসেজের কারণে চামড়া পাচারের সম্ভাবনা থাকবে। এই অবস্থায় আগামী এক মাস সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান বিটিএ সভাপতি। শাহীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বেশিরভাগ ট্যানারি উৎপাদনে নেই। গত বছরের ৪০-৪৫ শতাংশ চামড়া এখনো অবিক্রীত রয়েছে। সাভারে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার কারণে গত দুই বছর চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে আমাদের চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে ট্যানারি সরিয়ে নিয়ে মূলধন সঙ্কটে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, দেশে বেড়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার। বিদেশেও বড় বাজার তৈরি হয়েছে। সরকার এই খাতকে বিশেষ উৎসাহ দিতে নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর ‘চামড়া শিল্প বছর’  পালন করা হয়। অথচ এই খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছেন না।

বাংলাদেশে ব্যাংকের হিসাব বলছে, খেলাপিঋণের ভারে জর্জরিত চামড়া খাত। এরই মধ্যে এবার ঈদেও পশুর চামড়া সংগ্রহে ৬০০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে ব্যাংকগুলো। গত বছর ঋণ দেয় ৫২৬ কোটি টাকা। এবার জনতা ব্যাংক ২১০ কোটি টাকা, রূপালি ব্যাংক ১৭৫ কোটি টাকা, সোনালী ৭৬ কোটি টাকা এবং অগ্রণী ১৪৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অর্থের জোগান নেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দর ‘নামিয়ে আসছেন’ তারা। ঈদে চামড়ার সরবরাহ বেশি থাকায় সরকারকে ‘বুঝিয়ে’ এই সুযোগ নিয়ে যাচ্ছেন তারা। তারপর আবার নিজেদের টাকায় এত চামড়া একসঙ্গে কিনতে পারেন না। এ কারণে তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংক থেকে চামড়া খাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। এ খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে শাহীন আহমেদ বলেন, এবার মাত্র ৪২ ট্যানারিকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। বাকিরা বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় ঋণ পায়নি। এ অবস্থায় অনেক ট্যানারি মালিক আড়তদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেনি। অন্যদিকে বিশ্ব বাজারে চাহিদা কম। এসব কারণে কাঁচা চামড়ার দাম কমে গেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাভারে পরিকল্পিত ট্যানারি শিল্প নির্ধারিত সময়ে গড়ে না ওঠার দায় বিসিকের। ভুল তথ্য দিয়ে ট্যানারি মালিকদের সেখানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করেছেন যেসব ব্যবসায়ী তারা মাঠে মারা গেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিসিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে আমাদের।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads