• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
গণহত্যার বিচার দাবিতে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের সামনে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

ছবি - বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

নির্মূল অভিযান শুরুর বর্ষপূরণ

গণহত্যার বিচার দাবিতে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ আগস্ট ২০১৮

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশে আশ্রিতরা। ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ শুরুর বর্ষপূরণের দিনকে (২৫ আগস্ট) ‘কালো দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে গতকাল শনিবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বেশ কয়েকটি আশ্রয়শিবিরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা নির্যাতনে জড়িত মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি জানান।

এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে কুতুপালং বাজার, মধুছড়া, লম্বাশীয়া, জামতলী, তাজনিমারখোলাসহ আরো ১০টি শিবিরে বিক্ষোভ মিছিল করেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা। স্লোগানে তারা মিয়ানমারে স্বজন হত্যার বিচার দাবি ছাড়াও নিরাপদে স্বদেশে ফেরত যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। টেকনাফ ও উখিয়ার কুতুপালং বাজারে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশও করেন রোহিঙ্গারা।

এ সময় রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নিজ দেশে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের মমতায় আশ্রয় দিয়েছে। সব রকমের সহযোগিতাও দিচ্ছে। এ ঋণ কখনো শোধ হওয়ার নয়। কিন্তু আশ্রিত হয়ে আমরা কতদিন অন্যের ঘাড়ে পড়ে থাকব। সবকিছু পেলেও এখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কিছুদিন পর আমরা এদেশের বোঝায় পরিণত হব। তাই স্বদেশে ফিরে যেতে চাই। আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধ জানাচ্ছি, মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন। যাতে তারা আমাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন করায়। কারণ, আমাদের নিতে মিয়ানমার সামরিক জান্তা টালবাহানা শুরু করেছে।

কুতুপালং শিবিরে নাজির আহাম্মদ (৪৫) নামে এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘এ দিনটিকে (২৫ আগস্ট) আমরা কালো দিবস হিসেবে পালন করব। এই দিনে আমরা সব ধরনের কাজকর্ম থেকে বিরত থাকব, ঘরে রান্নাও হবে না। ২০১৭ সালের এই দিনেই প্রথম আমাদের গ্রাম বুচিদংয়ে আমাদের ওপর হামলা করে মগ সেনাবাহিনী, তারা একই রাতে আমাদের পুরোগ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেই রাতে হত্যা করা হয় আমার দুই ছেলে, এক মেয়ের জামাইকে। তুলে নিয়ে যায় আমার ভাইয়ের মেয়ে ও বৌকে; তাদের এখনো কোনো খোঁজ পাইনি।’

রোহিঙ্গা নেতা মুফিজুর রহমান বলেন, ‘৩০টি ক্যাম্পের সব ব্লকেই কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে নিরাপদে স্বদেশে ফেরার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বাংলাদেশে আশ্রয় না হলে এতদিন সাগরের পানিতে আমাদের লাশ ভাসত।’

আছিয়া খাতুন (২৪) নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, গত বছরের ২৮ আগস্ট তারা আট পরিবারের সদস্য টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসে। এর আগেই মিয়ানমারের সেনবাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় তার স্বামী ও ভাই। বাংলাদেশে আসার পথে হারিয়ে যায় তার ছেলে। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমরা বন্দি জীবন-যাপন করতাম। এখানে (বাংলাদেশ) এসে অনেক শান্তিতে আছি; তবু নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।’

বিক্ষোভের বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, ‘নিরাপদে স্বদেশে ফেরার দাবিতে রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করছে। তাই ক্যাম্পগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কথা বলে সে দেশের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। সেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের শিকার হয়ে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চুক্তি করলেও এখনো প্রত্যাবাসন শুরু করেনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads