• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী: টিআইবি

ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে খানা জরিপের তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী: টিআইবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ আগস্ট ২০১৮

গেল বছরের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবাখাতগুলোর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্যতম বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। এরপর রয়েছে পাসপোর্ট, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বিচারিক সেবা, ভূমি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত।

আজ বৃহস্পতিবার  ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে খানা জরিপের তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দেশজুড়ে একটি খানা জরিপ পরিচালনা করে টিআইবি। এতে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের ভিত্তিতে জনগণের মতামত জানতে চাওয়া হয়।

‘যেখানে ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে ৬৬.৫ শতাংশ মানুষ সেবাখাতগুলোতে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২.৫ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, পাসপোর্ট অফিস ৬৭.৩ শতাংশ এবং বিআরটিএ-তে ৬৫.৪ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে।’

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে খানা প্রতি ৫ হাজার ৯৩০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে সাধারণ মানুষ এবং সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়ের তিনটি খাত হলো গ্যাস (৩৩ হাজার ৮শ ৫ টাকা), বিচারিক (১৬ হাজার ৩শ ১৪ টাকা) এবং বীমা খাত (১৪ হাজার ৮শ ৮৬ টাকা)।

আর ২০১৭ সালে জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৬শ ৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) ৩.৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশের জিডিপির ০.৫ শতাংশ। মাথাপিছু প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ২০১৭ সালে ৬৫৮ টাকা; যা ২০১৫ সালে ছিল ৫৩৩ টাকা।

টিআইবি আরও বলছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কোনও কোনও খাতে দুর্নীতি উল্লেখ্যযোগ্য হারে বেড়েছে, (যেমন- গ্যাস, কৃষি, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা) এবং কোনও কোনও খাতে দুর্নীতি কমেছে যেমন শিক্ষা, পাসপোর্ট ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান।

জরিপে দেখানো হয়েছে, ঘুষ প্রদানকারী খানার ৮৯ শতাংশ ঘুষ দেয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না’ অর্থাৎ ঘুষ আদায়কে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে; যা ২০১৫ সালে ছিল ৭০.৯ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গাটি হচ্ছে যাদের দুর্নীতির মতো আইনের অপব্যবহার বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা, আইনের অপব্যবহার প্রতিরোধ করা, তাদের সেই খাতগুলোতে কিন্তু দুর্নীতির ব্যাপকতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং শীর্ষস্থানে, মানে প্রথম সারিতে তাদের অবস্থান।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের জন্য আরো উৎকণ্ঠার বিষয় হচ্ছে যে, ৮৯ শতাংশ মানুষ বলেছে যে তারা ঘুষ দিতে বাধ্য। কারণ ঘুষ না দিলে তারা সেবা পাবে না। অর্থাৎ যারা অনিয়ম করে, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক ধরনের এটাকে এমনভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে, এটা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, এর ফলে যারা ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তারা এটাকে জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে মেনে নেওয়ার মতো অবস্থায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘যারা সরকারি চাকরিজীবী তারাও কিন্তু দুর্নীতির শিকার হচ্ছে এবং তাদের ক্ষেত্রে এই হারটি হচ্ছে ৬১ শতাংশ। সরকারি খাতে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ফলে আমরা অনেকেই আশা করেছিলাম হয়তোবা দুর্নীতি কমবে উল্লেখযোগ্য হারে, কিন্তু যারা ঘুষ আদায়ে অভ্যস্ত তাদের জন্য এই যে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি কোনো উপাদান না।’

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘ঘুষ না দিলে সেবা না পেলে যার সেবা পাওয়ার কথা সে কেন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হচ্ছে? তাকে কেন আমরা জবাবদিহিতার সম্মুখীন করতে পারছি না?’  তিনি বলেন, ‘এবার তো আবার নির্বাচনেরও বছর। নতুন করে আমরা অনেক অঙ্গীকার দেখব, নির্বাচনী ইশতেহারও দেখব, সেখানেও হয়তো এই কথাগুলো থাকবে। কিন্তু আমাদের যে আবেদনটা থাকবে, যে কথাগুলো বলা হয় সেই কথাগুলো যেন কার্যকর করা হয়।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads