• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
বুকের মানিককে কবরে শুইয়ে দিলেন বাবা

কাঁদছেন আকিফার মা রিনা বেগম

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

চালকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, যুক্ত হয়নি ৩০২ ধারা

বুকের মানিককে কবরে শুইয়ে দিলেন বাবা

  • কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কুষ্টিয়ায় বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে আহত শিশু আকিফার মৃত্যুর ঘটনায় বাসচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এ মামলা করেন শিশুটির বাবা হারুন-উর-রশিদ। এর আগে রাত ৯টার দিকে কোলে করেই সন্তানের লাশ কবরস্থানেনিয়ে যান তিনি। পরে বুকের ধনকে অন্ধকার কবরে একা ফেলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরেন। এ সময় অশ্রুসিক্ত হন তার সঙ্গে থাকা অন্যরাও। আর বাড়িতে অনবরত কেঁদেই চলেছেন আকিফার মা রিনা খাতুন। অন্য স্বজনরাও শোকে মুহ্যমান।

দাফনের পর হারুন-উর-রশিদ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, টাকা কিংবা ক্ষমতার কাছে নত হব না। কোনো আপস-মীমাংসায়ও যাব না। সন্তান হত্যার যথাযথ বিচার চান তিনি।

কুষ্টিয়া মডেল থানা সূত্র জানায়, হারুন-উর-রশিদ বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তার শিশুসন্তান আকিফাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। মামলায় ঘাতক বাস ফয়সাল গঞ্জেরাজ পরিবহনের চালক খোকন, সুপারভাইজার ইউনুস মাস্টার ও বাসমালিক জয়নুল আবেদিনকে আসামি করা হয়েছে।

আহাজারি থামছে না আকিফার মা-বাবার : কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড় এলাকায় শিশু আকিফাদের বাড়িতে গতকাল শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে তখনো শোকের মাতম চলছে। সন্তানকে রক্ষা করতে না পারার যন্ত্রণা কুরে কুরে খাচ্ছে মা-বাবাকে। আদরের সন্তানকে নিজ হাতে কবরের মাটিতে শুইয়ে দিয়ে আসার পর থেকে পাগলপ্রায় আকিফার বাবা হারুন-উর-রশিদ। বাড়িতে মূর্ছা যাচ্ছেন মা রিনা খাতুন। কারো সান্ত্বনাতেই থামছে না তাদের আহাজারি।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আকিফার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়ে আকিফাদের বাড়িতে এসে পৌঁছয়। এরপর নিহতের আত্মীয়-্বজনের কান্না-আর্তনাদে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বুকের মানিক হারিয়ে অনবরত কেঁদে চলেছেন শিশু আকিফা খাতুনের বাবা হারুন।

কখনো উচ্চ স্বরে, কখনো বা নীরবে। সঙ্গে বিলাপ করে বলছেন, ‘আমারে ছাইড়া কোথায় গেলি, মা। আমি কী নিয়ে বাঁচব। কারে কোলে নিয়ে ঘুমাব? ঘুম ভাঙলে কারে কোলে নিয়ে বসে থাকব?’

গত দু’দিন ধরে না খেয়ে আছেন রিনা খাতুন। কান্নায় ভেঙে পড়ে আকিফার মা রিনা খাতুন বলেন, সেদিন কেন যে বাপের বাড়ি যেতে চাইলাম? না গেলে হয়তো বাস আমার আকিফাকে এভাবে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারত না।

নিহত আকিফার বড় ভাই কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র রোহান (১৫) কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমাদের তিন ভাই-বোনের মধ্যে আকিফা সবার ছোট ছিল। আমাদের আদরের বোনটাকে এভাবে হারাতে হবে, ভাবিনি।’

হারুন-উর-রশিদের বৃদ্ধ মা খোদেজা বেগম গত ছয় মাস ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। শরীর এতটাই দুর্বল যে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। নাতনিকে হারিয়ে তিনিও কাঁদছেন অনবরত।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় ৩০৪ ধারাসহ আরো কয়েকটি ধারার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৩০২ ধারায় মামলাটি হয়নি। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান ওসি। আসামিরা সবাই ফরিদপুর জেলা সদরের বাসিন্দা।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড় এলাকায় আকিফাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন তার মা রিনা খাতুন। থেমে থাকা রাজশাহী থেকে ফরিদপুরগামী ফয়সাল গঞ্জেরাজ পরিবহনের একটি বাসের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসটি কোনো ধরনের হর্ন না দিয়েই আচমকা মা-সন্তানকে ধাক্কা দেয়। এতে মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে মাথায় এবং চোখে আঘাত লেগে মারাত্মক আহত হয় আকিফা। এরপরও চালক বাসটি না থামিয়ে ওই মাকে আবারো ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত আকিফাকে প্রথমে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বুধবার বেলা ১১টায় সেখানে আকিফার অস্ত্রোপচার করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশুটি।

এ ঘটনা চৌড়হাস মোড়ের সোহাগ জুয়েলার্স নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভিতে ধারণ হয়। পরে এই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তোলপাড় শুরু হয়। বিচার দাবিতে বুধবার স্কুলের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা মানববন্ধন করে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads