• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বাইরে বিক্রি হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা

জেলার সর্বত্র গড়ে উঠেছে স্থায়ী দোকান ও শক্তিশালী সিন্ডিকেট

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যার পরিমাণ দৈনিক কোটি টাকা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিক্রি করা এবং তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বলেও মনে করেন তারা।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিক্রি করার জন্য কক্সবাজার শহরসহ প্রতিটি উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী দোকান। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ত্রাণের মাল সংগ্রহ করে দোকান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামাল খোলাবাজারে বিক্রির কারণে স্থানীয় দোকানগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে এসব ত্রাণসামগ্রী খোলাবাজারে বিক্রি হলেও প্রশাসন কোনো বাধা না দেওয়ায় তা আইনি বৈধতা পাচ্ছে বলে জানান সচেতন মহল।

টেকনাফ মুছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১ নং সেটের বাসিন্দা মনজিলা বেগম (৪০) জানান, আমার পরিবারে ৮ জন সদস্য। সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হয়, তার পুরোটা আমাদের লাগে না। তাই আমরা অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বাইরে বিক্রি করি। বিক্রি করা ত্রাণের মধ্যে আছে তেল, সাবান, চাল, বিস্কুট, মশারি, চা পাতা, দুধ ইত্যাদি। বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নবিউল আলম বলেন, শুধু আমি নই, এখানে বেশিরভাগ মানুষ ত্রাণের জিনিসপত্র বিক্রি করে। ১৫ দিন পরপর সরকারিভাবে আমাদের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। সেখানে অনেক জিনিস আমাদের অতিরিক্ত হয়, তাই সেগুলো বিক্রি করে দিই। এখানে সবাই ত্রাণের জিনিস বিক্রি করে দেয়। এ সময় মনির নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, সরকার আমাদের ত্রাণ হিসেবে চাল, ডাল, সাবান, তেল দিচ্ছে কিন্তু মাছ তরকারি তো আর দিচ্ছে না। তাই কিছু জিনিস বিক্রি করে মাছ তরকারির টাকা জোগাড় করি, এখানে দোষের কী আছে?

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত আইওএমের মাঠ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা অর্ধেকের বেশি ত্রাণ বাইরে বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিন ত্রাণের জিনিস নেওয়ার জন্য এখানে বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। এর আগে কিছু রোহিঙ্গা নেতা ত্রাণের মালামাল আগে সংগ্রহ করে। তারা আবার কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করে দেয় বাইরে। উখিয়া-টেকনাফের অনেক জায়গায় বড় বড় গুদাম করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামাল রাখার জন্য। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা এসব সামগ্রী কক্সবাজার শহরে এমনকি ঢাকা-চট্টগ্রামেও পাঠিয়ে দেয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝে মধ্যে যে মারামারি হয়, তা এই ত্রাণ বিক্রি নিয়ে।

উখিয়ার রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত ত্রাণ পাচ্ছে বলেই রোহিঙ্গারা বাইরে বিক্রি করছে। আমার জানামতে, এখানে অনেক এনজিও রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা করে, তাদের মধ্যে সঠিক সমন্বয় নেই- কে কোথায় ত্রাণ দিচ্ছে। আর সরকার রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিক্রিতে কোনো বাধা না দেওয়ায় তারা এটাকে টাকা আয়ের মাধ্যম হিসেবে ধরে নিয়েছে।

কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, রোহিঙ্গারা বেশি ত্রাণ পাচ্ছে, তাই তারা অতিরিক্ত ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে। আর চোখের সামনে স্থানীয়রা না খেয়ে থাকে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে এসে মাছ মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ ভাবনা জন্মাচ্ছে। আবার যারা ত্রাণ বিতরণের কাজে আছে, তারাও ব্যাপক অনিয়ম করছে বলে তথ্য আছে। আমার মতে, প্রশাসন রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামাল বাইরে বিক্রিতে বাধা না দেওয়ার কারণে ত্রাণ বিক্রি নিয়ে একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যা অপরাধ জন্ম দিচ্ছে। তাই খোলাবাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিক্রি বন্ধ করা উচিত।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. কাজী আবদুর রহমান বলেন, এটা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এভাবে খোলাবাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মালামাল বিক্রি করতে দেওয়া মোটেও উচিত নয়। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads