• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না ১৮ রোগী

ভুল ঠিকানা দেওয়ার কারণে সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১৮ রোগী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ

সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না ১৮ রোগী

  • কানু সান্যাল, পাবনা  
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৮

স্বজনদের অবহেলা আর ভুল ঠিকানা দেওয়ার কারণে সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১৮ রোগী। এদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন ২১ থেকে ২৬ বছর ধরে। ফলে হাসপাতালের চার দেয়ালের মধ্যেই তাদের কেটে যাচ্ছে জীবন। মারা গেলে মরদেহটিও গ্রহণ করতে চায় না পরিবার। অপরদিকে পাশাপাশি দীর্ঘ পাঁচ দশকেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দেশের মানসিক রোগের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘পাবনা মানসিক হাসপাতালে’। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর ৭ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এমন বাস্তবতায় আজ বুধবার ১০ অক্টোবর পাবনাসহ সারা দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।

মঙ্গলবার সকালে পাবনা শহরতলির হেমায়েতপুরে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার মগবাজারের নয়াটোলা আমবাগান এলাকার আবুল হাশেম মিয়ার ছেলে সাঈদ হোসেন। ১৯৯৬ সালের ২২ জুলাই মানসিক রোগী হিসেবে তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে যান স্বজনরা। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২১টি বছর। কিন্তু সুস্থ হয়েও স্বজনদের ভুল ঠিকানার কারণে বাড়ি ফিরতে পারছেন না তিনি। ৩৬ বছর বয়সে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখন তার বয়স ৫৬ বছর। ইচ্ছা থাকলেও স্বজনদের কাছে ফিরতে পারছেন না তিনি। শুধু সাঈদ নয়, ঢাকার পল্লবী এলাকার কাজী গোলাম গাউসের ছেলে কাজী আকরামুল জামান ও পাবনার আটুয়া মোমেনাবাদ এলাকার ডলি খাতুনসহ ২০ রোগীর অবস্থা একই। স্বজনদের অবহলোয় সুস্থ হয়েও বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তারা।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা খাতুন জানান, দীর্ঘ দিন ধরে এসব রোগীর সেবা করতে গিয়ে তারা এখন আমাদের স্বজন হয়ে গেছে। আমরাও তাদের নিজের পরিবারের মানুষ হিসেবে দেখি। আমরা যেভাবে তাদের বলি সেভাবেই তারা চলে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের রোগী তথ্য প্রেরণ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন হোসেন জানান, রোগী ভর্তির সময় নেওয়া তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক থাকলেও পরবর্তী সময়ে তাদের সন্ধান পাওয়া যায় না। এমনকি কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহটিও নিতে চান না স্বজনরা। এর পেছনে রয়েছে আর্থিক, সামাজিক ও সম্পত্তিজনিত নানা কারণ। 

এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের আন্তরিকতার অভাবকেই দায়ী করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর মার্যাদাবোধ নিয়ে তাদের মানসিক অবস্থা ও চিন্তা চেতনার পরিবর্তন করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস জানান, রোগীকে ভর্তির পর থেকে তাদের স্বজনরা আন্তরিক থাকেন না। শুধু তাই নয়, কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহটি নিতেও তাদের কোনো আগ্রহ থাকে না। ধর্ম অনুযায়ী লাশের দাফন আমাদেরই করতে হয় বেশিরভাগ সময়। তবে সম্প্রতি হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বৃদ্ধনিবাস তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবনা মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মানসিক হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. শাফকাত ওয়াহিদসহ দুজন চিকিৎসক চুক্তিভিত্তিক এ রোগী দেখছেন।

উল্লেখ্য, দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে শহরতলির হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জায়গার ওপরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ৬০টি, সময়ের চাহিদায় যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ শয্যায়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads