• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পরেরবার ডিজিটাল আইন নিয়ে ভাবব : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পরেরবার ডিজিটাল আইন নিয়ে ভাবব : প্রধানমন্ত্রী

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন তো জাতীয় সংসদে পাস হয়ে গেছে। এখনই এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার কী আছে? আর এখন মানববন্ধন করে লাভ কী? পরেরবার ক্ষমতায় এলে দেখা যাবে। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে (যুক্তরাজ্যে) এ আইন আরো কড়া। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী এসব তথ্য জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, সচিবালয়ে গতকাল সোমবার দীর্ঘ সময় ধরে চলা বৈঠকটি শেষ হয় দুপুর ২টার কিছু পরে। বৈঠকে সম্প্রচার কমিশন আইনের বিভিন্ন দিক আলোচনার সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ডিজিটাল আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এরপর তথ্যমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ডিজিটাল আইন নিয়ে কথা বলেন। ডিজিটাল আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদকে আলোচনার জন্য তিন মন্ত্রী যে কথা দিয়েছিলেন আলোচনার জন্য গতকালের মন্ত্রিসভায় তা আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনার পর অনেকটাই নিশ্চিত যে আপাতত ডিজিটাল আইন পাল্টাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সম্প্রচার আইনের বিষয় নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বলেছেন ইংল্যান্ডে আইনটি আরো কড়া। তবে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সম্পাদক পরিষদের তথ্যের ঘাটতি আছে। আমরা তাদের বলেছিলাম, তাদের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাগুলো আছে মন্ত্রিপরিষদের সভায় উত্থাপন করব। কিন্তু অমুক সভায় উত্থাপন করব এটা কিন্তু বলিনি। তিনি বলেন, আজকের (সোমবার) মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে এই আইন হচ্ছে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য, সাইবার অপরাধীদের জন্য, হ্যাকারদের জন্য ও ডিজিটাল সমাজের নিরাপত্তার জন্য। গণমাধ্যমের কিংবা গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে এই আইন না। এই আইনে আমরা কোনো জায়গায় গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখিনি। এরপরও যদি কোনো আলোচনা থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা মন্ত্রণালয় আলোচনা করে দেখবে।

এর আগে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা তো হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আর কী আলোচনা করবেন। তবে অন্য কোনো মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী আইনটি নিয়ে কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বেশিরভাগ সময় বলেছেন। 

সূত্র জানায়, বৈঠকের নিয়মিত এজেন্ডা সম্প্রচার আইন-২০১৮-এর বিষয়ে আলোচনার সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতাদের আপত্তি রয়েছে উল্লেখ করে আলোচনা শুরু করেন। এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাস করেছি। কিন্তু এ আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তন চেয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সম্পাদক পরিষদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সম্পাদক তো বিভিন্ন সময় ভুল নিউজ ছেপে বলে, সেটি তাদের নয় একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নিউজ বলে দুঃখ প্রকাশও করে। তারা আমার বিরুদ্ধে লেখে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে তো কিছু লেখে না। তিনি বলেন, যারা সত্যানুসন্ধানী কিংবা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে চান, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রতিবেদন করতে চান তাদের কোনো সমস্যা নেই। যারা শুধু দেশ, সরকার কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে মিথ্যা উদ্দেশ্যে সংবাদ রচনা করবে তাদের কড়াভাবে দেখা হবে। এ ছাড়া আইন পাস হয়েছে, এখন মানববন্ধন করে লাভ কী? তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এত উদ্বেগ কেন? ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ চিন্তা থেকে বিবেচনা করলে হবে না। সমগ্র রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো বাধা হবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বলেন, যুক্তরাজ্যের এ সংশ্লিষ্ট যে আইন রয়েছে সেটা আরো বেশি কড়া।

এদিকে সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারায় আপত্তি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে সম্পাদক পরিষদ। সোমবার বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে ১১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads