• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
শিগগির প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল

লোগো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

জাতীয়

শিগগির প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল

পাঁচ সচিবের অবসরে প্রশাসনে চলছে বহুমাত্রিক হিসাব

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০১৮

সময় যত গড়াচ্ছে প্রশাসনের সচিব পদে রদবদল নিয়ে স্নায়ুচাপ তত বাড়ছে। কে কে বড় পদে যেতে পারবেন সেসব নিয়েই মূলত চলছে জল্পনা-কল্পনা। চলতি অক্টোবরে এ পর্যন্ত ৫ জন সচিব অবসরে গেছেন। এসব পদ পূরণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই ওই রদবদল হবে। এর বাইরে কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ভারপ্রাপ্ত সচিব হতে পারেন। অবশ্য রদবদলের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে থাকে। তবে শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তারপরও পদ এবং পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা নানা জায়গায় ইতোমধ্যে লবিং শুরু করেছেন। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ৫ জন কর্মকর্তা চলতি অক্টোবরে অবসরে গেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবও রয়েছেন। এরা হলেন গত ১৪ অক্টোবর ভূমি সচিব মো. আবদুল জলিল, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম, ১৮ অক্টোবর পিএসসির সচিব বেগম আখতারী মমতাজ এবং ওএসডি সচিব সুব্রত মৈত্র। ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. মাহফুজুর রহমানও অবসরে যাচ্ছেন। এছাড়া আলোচনায় রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বপদে থাকতে চাচ্ছেন না। তিনি রাষ্ট্রদূত হয়ে যেকোনো দেশে চলে যেতে চান বলে সচিবালয়ে কথাটি প্রচারিত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে কাছাকাছি সময়ে একসঙ্গে এত পদ ফাঁকা হওয়া এর প্রভাব পড়েছে জনপ্রশাসনে। একই সঙ্গে শূন্য হওয়া এসব পদ পাওয়া নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। অবসরের সময় হওয়া কোনো কোনো সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে চেষ্টা করছেন। তবে একটি পক্ষ এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করছে। এই পক্ষের কর্মকর্তারা নিজেরাই সচিব হওয়ার দৌড়ে আছেন।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রদবদল রুটিন কাজ। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় জনস্বার্থে কিছু রদবদল করতে হয়। তবে জনপ্র্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সচিব পদগুলো পূরণ হয়ে যেত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নানা হিসাবের কারণে সচিব পদে রদবদল পিছিয়ে যায়। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন এই আদেশ জারি হতে পারে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এসব পদের একটি পদেও কারো চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। এর ফলে এসব পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে রদবদল হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়া সত্যি সত্যি মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বপদে থাকতে না চাইলে সেখানে নতুন কাউকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে পদায়ন করা হবে। একই সঙ্গে অন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদেও রদবদল আনা হবে প্রশাসনিক কারণে। এছাড়া দুই-একজন অতিরিক্ত সচিবকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে।

নির্বাচনের প্রাক্কালে সচিব পদে কারো চাকরির মেয়াদ না বাড়ানোর কারণে প্রশাসনে আপাতত স্বস্তির বার্তা বইছে। কারণ একজনের চাকরির মেয়াদ বাড়লে নিচের অন্তত ৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি বন্ধ থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। ৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন সচিব পদের যোগ্যতা অর্জন করলেও পদের অভাবে তাদের সে সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসব ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অনেকেই খোলাখুলিভাবে সব পদে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর বিপক্ষে জনমত গঠন করছেন। তবে তারা এ-ও বলছেন- যাদের পক্ষে জোরালো পছন্দ ও খুঁটি আছে তারাই চাকরির মেয়াদ বাড়াতে পারছেন। আর যাদের তা নেই তারা যতই যোগ্যতাসম্পন্ন কিংবা আদর্শিকভাবে সরকারের সমর্থক হোক না কেন তাদের কপালে শিকে ছিঁড়ছে না। এটি অবশ্য চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেই নয়, পদোন্নতি কিংবা ভালো পদে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ঘটছে।

১৯৮৬ সালে যোগ দেওয়া (১৯৮৫ ব্যাচ) কর্মকর্তাদের বড় অংশ অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকরিরত আছেন। তারা আগামী জানুয়ারিতে সচিব পদে আসীন হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৪ ব্যাচের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাও অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত কিংবা ওএসডি হয়ে আছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে জনপ্রশাসন এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদটি ঘিরে প্রশাসনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। জ্যেষ্ঠ থেকে কনিষ্ঠ সবার মধ্যেই এ পদে নতুন কেউ আসছেন কি না তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত যদি মন্ত্রিপরিষদ সচিব না থাকেন তবে প্রশাসন জুড়ে বড় মেরুকরণ হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads