• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
পুলিশের সুনাম কেবলই বিদেশে

শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করে সুনাম বয়ে এনেছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পুলিশের সুনাম কেবলই বিদেশে

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৮

বিদেশের মাটিতে দায়িত্ব পালনে সুনাম অর্জন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। গত ২৯ বছরে নিষ্ঠার সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করে বাহিনীটির সদস্যরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। বিপরীতে দেশের মাটিতে তেমন ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারেননি তারা। পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের মাটিতে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার এবং আর্থিক নিরাপত্তার অভাবে দেশে পুলিশ সদস্যরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। বরং আছে আর্থিক নিরাপত্তা। জাতিসংঘে সে সুযোগ সীমিত এবং প্রতিদিন একজন কর্মকর্তা ১০০ থেকে ১৫০ ডলার বৈধভাবে আয় করেন। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার টাকা। ফলে সেখানে তারা তুলনামূলকভাবে বেশি মনোযোগী হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। দেশে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে জনমনে এখনো মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এখানে পুলিশকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সূত্রমতে, দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারা বিরোধী দল দমনে পুলিশকে ব্যবহার করে। পুলিশ ‘দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন’ তথা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও দেশের জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে- এটাই মানুষ প্রত্যাশা করে। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের অনেকেই পদোন্নতি ও পছন্দমতো পোস্টিংয়ের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী থাকে। ফলে রাজনৈতিক দলীয় সরকারগুলোও পুলিশকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করার সুযোগ পায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিন যত যাচ্ছে পুলিশের কাজের পরিধি বাড়ছে। বাড়ছে আকার ও জনবল। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদাও। পুলিশ বাহিনীর সেবার মান তুলনামূলকভাবে বাড়লেও এখনো অসাধু সদস্যরা ছিনতাই, চুরি, মাদক ব্যবসাসহ এমন নানা অপরাধে জড়িয়ে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিতে আঘাত করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ‘পোশাকধারী’ অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে জনমনে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। গোয়েন্দা পুলিশ সাদা পোশাকে মানুষকে তুলে নিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন আটকে রেখে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে। বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও এ নিয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। পুলিশ বাহিনীর একটি অংশ এখনো সাধারণ মানুষকে আইনি সহায়তা দেওয়ার পরিবর্তে হয়রানি করে থাকে।

এ ব্যাপারে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী গতকাল মুঠোফোনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে থাকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আর্থিক নিরাপত্তা। একজন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে দেড়-দুই বছর কাজ করলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা উপার্জন করেন। একজন মানুষের ৫০ লাখ টাকা থাকলে সেই টাকা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবেই দিনাতিপাত করতে পারেন।

বাংলাদেশে পুলিশ সেভাবে ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে না পারার অনেক কারণ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা যে বেতন পান সেই টাকা দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তাদের খরচ করে ফেলতে হয়। একজন সাব-ইন্সপেক্টর কোনো সোর্সমানি পান না। অথচ তাকে নানা কাজে সোর্স নিয়োগ করতে হয়। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বহু দূর-দূরান্তে যেতে হয়। সেখানে যাতায়াতসহ নানাবিধ খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়। ফলে তাদেরকে বাড়তি আয় করতে হয় এবং সেটা মামলার বাদী, বিবাদীর কাছ থেকে তারা নেন। ফলে সংশ্লিষ্টদের কাছে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ১৮ হাজার ৪১৯ জন সদস্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ শেষ করেছেন। এর মধ্যে নারী সদস্য রয়েছেন ১ হাজার ১৮৪ জন। বর্তমানে দারফুর, কঙ্গো, হাইতি, মালি, দক্ষিণ সুদান, লাইবেরিয়া, থাইল্যান্ড ও জাতিসংঘ সদর দফতরে ৮১৫ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শান্তি মিশনে কাজ করতে গিয়ে ২০ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা জাতিসংঘে যাত্রা শুরু করেন।

তবে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশন) মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষও এখন পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে। পুলিশ বাহিনী এখন আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি বাহিনী।

১৭ কোটি মানুষের দেশ, অপরাধ কোথায়- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একসময় ছিল নৈরাজ্য আরা সহিংসতা, পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের উৎপাত। গড়ে প্রতিদিন সারা দেশে খুন হতো ১২-১৪ জন। জঙ্গি দমন, অপরাধ রোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনী তো অনেকটাই সফল। এখন তো পরিস্থিতি স্থিতিশীল। মানুষ নিরাপদে বাস করছে, স্বস্তিতে আছে।

কিছু অসাধু সদস্য অপকর্মে জড়িয়ে পুলিশের অর্জনকে ম্লান করছে মন্তব্য করে মোখলেসুর রহমান বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ফলে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন কমে আসছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads