• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কমছে না দারিদ্র্য

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বিআইডিএসের গবেষণা প্রতিবেদন

প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কমছে না দারিদ্র্য

দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে সম্পদ ১ ভাগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ নভেম্বর ২০১৮

১৯৮০ সাল থেকে এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ পয়েন্ট করে বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৭ শতাংশের বেশি। এরপরও দেশের প্রতি চারজনে একজন এখনো দরিদ্র। আর চরম দরিদ্র অবস্থায় আছেন দেশের প্রতি আটজনের একজন। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দারিদ্র্যের হার প্রত্যাশিত হারে না কমায় প্রবৃদ্ধির মান নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। বৈষম্যের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধির সুফল দরিদ্ররা কাঙ্ক্ষিত হারে পাচ্ছে না বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ড. কাজী ইকবাল ও নাহীদ ফেরদৌস পবনের গবেষণাটি গতকাল বিআইডিএসের বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৈষম্য। ফলে অর্জিত সম্পদের পাহাড়ের মালিক হচ্ছেন ধনীরা। বর্তমানে শীর্ষ ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে ৩৮ ভাগ সম্পদ। ২০১০ সালে এর হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮৫ ভাগ। ধনীদের সম্পদ বাড়লেও একই সময়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের সম্পদ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০১০ সালেও দরিদ্রতম ১০ ভাগ মানুষের হাতে ছিল দুই শতাংশ সম্পদ। বর্তমানে তাদের মালিকানায় আছে মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক আয় বৈষম্যের কারণে প্রবৃদ্ধি দেশের দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ছাড়া সম্পদের অভাব, সম্পদের উৎপাদনশীলতার অভাব, ব্যাংক ব্যবস্থায় গরিবদের কম অন্তর্ভুক্তি দারিদ্র্য নিরসনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নীতি সহায়তাও ধনীদের পক্ষে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গুণগত মান বেড়েছে। কিন্তু সেটি খুবই কম। কারণ বৈষম্য বেড়েছে, দারিদ্র্য সেই হারে কমেনি, কর্মসংস্থানও বাড়েনি। দারিদ্র্য নিরসনে সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় তুলনামূলক বিনিয়োগ বাড়ায়নি। তাছাড়া অর্থনীতি বহুমুখীকরণ হয়নি। গ্রামের অর্থনীতি ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল।

প্রবন্ধে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় কর্মসংস্থান বাড়ানোর হার কম। এ ছাড়া কর্মস্থানের হার যেটি আছে সেটি ধরে রাখতে হলে প্রতিবছর ১১ লাখ লোকের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এক্ষেত্রে ১৯৮১-৯০ সাল পর্যন্ত ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সেটি বেড়ে ১৯৯১-২০০০ সালের মধ্যে হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সম্মেলনে উপস্থাপন করা এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তা শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে মহিলার সংখ্যা বাড়ছে। ২০০১ সালে এ হার ছিল ২ দশমিক ৮০ শতাংশ। সেটি বেড়ে ২০১৩ সালে হয়েছে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। তাছাড়া আর্থিক ইউনিটগুলোর সামষ্টিক ব্যবস্থায়ও এসেছে পরিবর্তন। এক্ষেত্রে মহিলা প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮৫ শতাংশ মহিলা কর্মী কাজ করছে। এ ছাড়া মহিলা প্রধান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ট্রেড লাইসেন্স ২০০৯ সালে ছিল ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ, সেটি বেড়ে ২০১৭ সালে হয়েছে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া টিআইএন ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৪  শতাংশ। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বড় শোরুমের সংখ্যা ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ। 

অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্নআয়ের দেশগুলোর জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে। এ ছাড়া মোট কর্মসংস্থানের ৭০ শতাংশ আসে এই খাত থেকেই। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৫০ দশমিক ৯ শতাংশই এসএমই খাতের। মোট শিল্প কর্মসংস্থানের ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে। পাশাপাশি অর্থনীতিতে যে পরিমাণ মূল্য সংযোজন হয় তার ৪৭ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান আরো বাড়ানো সম্ভব বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসএমই প্রাতষ্ঠানগুলোকে ক্লাস্টারভিত্তিক ভাগ করা গেলে অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান বাড়বে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাংক ঋণ সুবিধা বৃদ্ধি, পুঁজির জোগান বৃদ্ধি, প্রযুক্তির হস্তান্তর এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে নীতিসহায়তার কার্যকর ভূমিকা বেশি মিলবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads