• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

নির্বাচনকালীন সরকার

ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা খোলাসার চেষ্টা করলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। স্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারছিলেন না এ নিয়ে। তারপরও যা বলেছেন তাতে বোঝা গেছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে যে সরকার আছে সেটিই নির্বাচনকালীন সরকার। তিনি সংবিধানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এও বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে আমাদের সংবিধানে এ সম্পর্কে তেমন কিছু বলা নেই। তবে এ সরকার মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প পাস করতে না পারলেও আইন পাস করতে পারবে এবং তা রুটিনওয়ার্কের মধ্যেই পড়ে বলে তিনি স্পষ্ট মন্তব্য করেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক বসে। নির্বাচন সূচি ঘোষণার পর এটিই ছিল মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৮’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার খুঁটিনাটি জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ সময় নির্বাচনকালীন সরকার, পদত্যাগী মন্ত্রীদের নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে নানা ছুঁতো খুঁজেছেন। ‘আমার ভান্ডারে তথ্য নেই, আমার জানা নেই’- এমন তথ্য বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফাঁকে ফাঁকে দুয়েকটি উত্তর দিয়েছেন।

এতে তিনি বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ‘ওই সরকারের’ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি। কনস্টিটিউশনে ওভাবে লেখা নেই আসলে, এমনই। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, সরকার রেগুলার সরকারই আছে। এগুলো (নির্বচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) আমাদের দেওয়া নাম, এগুলো কিন্তু কনস্টিউশনাল নাম না। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন। ওই মন্ত্রিসভার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’। শরিক দলগুলোর নেতাদের নেওয়া হয় ওই মন্ত্রিসভায়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। গত ২২ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় ‘সব দলের’ প্রতিনিধিই আছেন। আর নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে এবার নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করছেন না।

ভোটের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যেই গত ৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সরকারের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পদত্যাগপত্রও জমা দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তাদের অফিস চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। গত বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, শুক্রবারই তা জানা যেতে পারে। এরপর গত চার দিনে সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার বা মন্ত্রিসভার পরিবর্তন নিয়ে কিছু জানানো হয়নি।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি। তফসিল যেহেতু হয়ে গেছে, সেহেতু বর্তমান সরকারকেই ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বলার পক্ষপাতী তিনি। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদনে কোনো বাধা নেই। আইন অনুমোদন ক্যাবিনেটের কার্যক্রমের মধ্যেই পড়ে, রুটিনই বলা যায় এটা। এটাতে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পকে স্পর্শ করে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিলেও তা গ্রহণ করে গেজেট জারি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মন্ত্রিত্ব বহাল থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের নাম পরিবর্তন : বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম করা হয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন এই তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থা এটি। শুরুতে এটি ১৯৭৩ সালের একটি রেজ্যুলেশন দিয়ে চলছিল। ১৯৮২ সালে ট্যারিফ কমিশন আইন হয়। এবার সেই আইনের কিছু সংশোধন হয়েছে। সংস্থার নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশ্ববাণিজ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে এর কার্যাবলি নির্ধারণের জন্যই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এই নামের বিষয়ে ব্যবসায়ীদেরও মতামত ছিল।

আগরতলায় যাবে বাংলাদেশি ট্রাক এবং ৪৭০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করবে বাংলাদেশ-ভারত : বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্রেলার সরাসরি ভারতের আগরতলা পর্যন্ত যেতে পারবে। সীমান্তে ট্রাক বদলের প্রয়োজন হবে না। গতকাল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘দ্য অ্যাডেমডাম টু দ্য প্রোটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’-এর খসড়ার ভূতাপেক্ষ অনুমোদন হয়েছে। আইনের খসড়ায় আরো কয়েকটি বিষয় উল্লেখ আছে। সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ এবং সিরাজগঞ্জ থেকে ভারতের দই খাওয়া- এই দুই রুটের দূরত্ব নৌপথে ৪৭০ কিলোমিটার। এই রুট খনন করা হবে। খননকাজের ৮০ ভাগ ব্যয় বহন করবে ভারত এবং ২০ ভাগ বহন করবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া নৌ-জাহাজে কোনো নাবিক মারা গেলে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতো, নাবিকদের মরদেহ নিজ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে খসড়ায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে নৌ প্রোটোকল, এখানে পোর্ট অব কল হিসেবে বাংলাদেশের পানগাঁও ও ভারতের আসামের ধুবড়ি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে মন্ত্রিসভাকে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ-সচিব পর্যায়ের সভায় ভারতীয় পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিবহনের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান শফিউল আলম।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads