• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
নতুন সরকারের সামনে ১০ চ্যালেঞ্জ

লোগো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

জাতীয়

নতুন সরকারের সামনে ১০ চ্যালেঞ্জ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০১৮

ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও দক্ষ মানব সম্পদে খরা চলছে কয়েক বছর ধরে। আর্থিক খাতে অনিয়ম, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ, রফতানিতে একক পণ্যে নির্ভরতা আর রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারকে এমন ১০টি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুই দিনের গবেষণা সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে গতকাল সোমবার এসব বিষয় উঠে এসেছে। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে গত রোববার এ সম্মেলন শুরু হয়। উল্লিখিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকার গঠন করতে যাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিআইডিএস আয়োজিত বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে মোট ১৭টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। ‘উন্নয়ন পূর্বাভাস : পরবর্তী সরকারের জন্য বার্তা’ শীর্ষক সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাঈদি সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এমএ তসলিম, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিআইজিএম) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতি ও রাজনীতি দুটি পরাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তবে রাজনীতিই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনীতির ওপরে অর্থনীতিকে স্থান দিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। এ লক্ষ্যে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির তাগিদ দেন তিনি।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাণিজ্য চক্র কাজ সক্রিয় আছে বলে মন্তব্য করেন ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তড়িঘড়ি করে অসংখ্য প্রকল্প পাস হচ্ছে। এগুলোর অর্থায়ন কোথায় থেকে, কীভাবে হবে সেটি চিন্তা করা হয়নি। অনেকের চাওয়া পাওয়ার দিকে চেয়ে এমনটি করা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয়ের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ যাতে মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ে না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, উন্নতি ধরে রাখতে মার্চ থেকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু হবে। ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরির কাজও শুরু হবে। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও পায়রা বন্দরের মতো বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী দিন হবে মেগা প্রকল্পের দিন।

ড. জাঈদি সাত্তার বলেন, অর্থনীতি বহুমুখীকরণে আগামী সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে উচ্চ প্রযুক্তির প্রয়োগ, শ্রমশক্তিকে বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতির মধ্যআয়ের মহাসড়কে আছে। এ সড়কের পরিক্রমায় জ্বালানি প্রয়োজন হবে। বৈদেশিক আর্থিক বাজারে অস্থিরতা, মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা, মুদ্রা বাজারে বাড়তি সুদ, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের অধিক মূল্যস্ফীতি, একক পণ্যে রফতানি নির্ভরতা, বেসরকারি বিনিয়োগে দৈন্যদশা ও বৈষম্য আগামী সরকারের জন্য স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির তাগিদ দেন তিনি।

ড. তারেক বলেন, দুর্নীতি বেড়ে গেলে ছাড় দেওয়া বা অবহেলা করা উচিত নয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ থাকতে হবে। আগামী ১০ বছরে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে নিয়ে যেতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। গবেষণা ফেলো ড. বিনায়ক সেন বলেন, আর্থিক অনেক সূচকে নেতিবাচক অবস্থা দেখা যাচ্ছে। আগামী সরকারকে সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। ড. এম এ তসলিম বলেন, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads