• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
প্রত্যাবাসন সিদ্ধান্তে অনড় সরকার

সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানরা

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে সংশয়

প্রত্যাবাসন সিদ্ধান্তে অনড় সরকার

  • আহমেদ আতিক ও জাবেদ ইকবাল
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০১৮

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কাজ চূড়ান্ত করে এনেছে বাংলাদেশ সরকার। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ বৃহস্পতিবার থেকেই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ না থাকার অজুহাতে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, ট্রানজিট ক্যাম্পে তাদের স্থানান্তর না করাসহ নানা কারণে আজই প্রত্যাবাসন শুরু হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। রোহিঙ্গা শরণার্থী ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিয়য়ক কমিশন ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা এই বিষয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের শেষ মুহূর্তের নির্দেশের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করলেও ওই দুই কর্মকর্তার কথায় সংশয় প্রকাশ পেয়েছে স্পষ্টতই। বুধবার সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফের কেরণতলীর (নয়াপাড়া) ট্রানজিট ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি কাউকে। অথচ এই ক্যাম্পের ঘাট দিয়েই নাফ নদী হয়ে নৌপথে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত কেরণতলী দিয়ে সম্ভব না হলেও কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প দিয়ে শুরু হতে পারে প্রত্যাবাসন। তবে ক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআরকে দেওয়া ১৫০ জনের তালিকা অনুসরণ নাও করা হতে পারে।

মোহাম্মদ আবুল কালাম বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, তারা প্রক্রিয়াটি শুরু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঘরে ঘরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝানো। তবে প্রথম দলে যে ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের কথা রয়েছে তাদের অনেককেই সরাসরি কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি। কেরণতলীর ট্রানজিট ক্যাম্পেও স্থানান্তর করা হয়নি।

তিনি বলেন, এই অবস্থায় নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, বৃহস্পতিবার থেকেই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে কি না। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের ওপর নির্ভর করছে। আর সে কারণেই তিনি গতকাল সারাদিন সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে কাটিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাও।

তবে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে অবস্থান করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাথমিক দলে প্রত্যাবাসনের জন্য যাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল তাদের অনেকেই যেতে আগ্রহী না। তারা ভরসা পাচ্ছে না। এই জন্য প্রথম দলে বালুখালীতে অবস্থান করা কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়ে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকও গতকাল বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আশা করি দুই দেশের নিয়ম মেনেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে প্রত্যাবাসন ভয়ে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বেড়াচ্ছে এমন খবরকে তিনি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।

ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা জানিয়েছে, দুই দিন আগে থেকেই তারা তালিকাভুক্ত শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করেছেন। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ শরণার্থী পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কাছে এ বিষয়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। নিয়মানুযায়ী এর পরেই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুরু করা যাবে।

তবে তিনি বাংলাদেশের খবরকে জানান, তারা যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের অনেকেই মিয়ানমারে ফিরতে চান না। সেখানে এখনো ফেরার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।

এদিকে এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি নিয়ে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নানা ধরনের গুজব ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার নয়াপাড়া ক্যাম্পে আবদুল মান্নান নামক এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঘরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে তিনি একা। প্রত্যাবাসনের ভয়ে তার পরিবারে বাকি সাত সদস্যকে তিনি কুতুপালং ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

৩০ অক্টোবর ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে দুই দেশের কর্মকর্তারা নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা করেন। সেই মোতাবেক ১৫ নভেম্বর ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে কার্যক্রমটির শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিদিন ১৫০ জন করে ১৫ দিনে প্রথম ধাপের এ প্রত্যাবাসন শেষ হওয়ার কথা।

তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর। জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ নয়। গত শুক্রবার জাতিসংঘসহ রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করা ৪২টি সহায়তা সংগঠন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা কৃতজ্ঞ। কিন্তু সব বিষয়ের যাচাই না করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো ‘বিপজ্জনক’। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে এখন ফিরে গেলে কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা এবং এ ব্যাপারে তথ্য না পেয়ে তারা বিপর্যস্ত।

গত মঙ্গলবারও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠালে এ জনগোষ্ঠীর জীবন ফের ঝুঁকিতে পড়বে। তাদের বলপূর্বক ফেরত পাঠানো হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে সংশয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads