• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

রাজি হলেই শুরু হবে প্রক্রিয়া

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত

  • টেকনাফ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ নভেম্বর ২০১৮

শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী বিক্ষোভের মুখে সেটি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কবে আবার এই প্রক্রিয়া শুরু হবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি এখনো।

ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানিয়েছেন, পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী উঁচিপ্রাং শরণার্থী শিবিরের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের ঘুমধুম ট্রানজিট ঘাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস, মাইক্রো, ট্রাক, চিকিৎসাদল, খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু কোনো রোহিঙ্গাই স্বেচ্ছায় ফিরতে চাননি। এই অবস্থায় প্রক্রিয়াটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা রাজি হলেই শুরু হবে প্রক্রিয়া।

সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উঁচিপ্রাং শরণার্থী শিবিরে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এ সময় ‘না, না, আমরা ফেরত যাব না’ বলে স্লোগান দিতেও দেখা যায় তাদের। অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, নাগরিত্ব ছাড়া আমরা কখনো মিয়ানমারে ফিরে যাব না।’

প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম মনে করেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রত্যাবাসন স্থগিত করার জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার যে ‘চাপ’ ছিলও তাও ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলেন, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমার সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলো আমরা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরকে জানিয়েছি। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও মাঝিদের মাধ্যমে দফায় দফায় বৈঠকে বসে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাদের কেউ কেউ ফিরতে রাজিও ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের কেউই যেতে রাজি হচ্ছে না।

রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, রাখাইনে এখনো নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। উঁচিপ্রাং ক্যাম্পের ছব্বির মাঝি বলেন, রাখাইনে ছয় বছর আগে থেকে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সিটওয়ে আইডিপি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদেরকে এখনো নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরকে দেওয়া হয়নি নাগরিত্বও। স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এ শঙ্কা থেকে আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে নারাজ।

প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্ত টেকনাফ পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তাজর মল্লুক, লাইলা বেগম ও রাহেলা বেগম জানান, রাখাইনে বিগত সময়ে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও নারী নির্যাতনের মতো অসংখ্য অপরাধের বিচার এখনো তারা পাননি। ফেরার আগে সেইসব ঘটনার বিচার চান তারা। এ ছাড়া সেখানে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চিতের দাবিও তাদের।

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরাও মনে করেন তেমনটাই। তিনি বলেন, সেখানে এখনো ফেরার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ কারণেই যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে তাদের অনেকেই মিয়ানমারে ফিরতে চান না।

৩০ অক্টোবর ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে দুই দেশের কর্মকর্তারা নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা করেন। সেই মোতাবেক গতকাল ২ হাজার ২৬০ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে কার্যক্রমটির শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিদিন ১৫০ জন করে ১৫ দিনে প্রথম ধাপের এ প্রত্যাবাসন শেষ হতো।

তবে এ নিয়ে আপত্তি জানায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো। জাতিসংঘ বলে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াটা নিরাপদ নয়। গত শুক্রবার জাতিসংঘসহ রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করা ৪২টি সহায়তা সংগঠন এক বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা কৃতজ্ঞ। কিন্তু সব বিষয়ের যাচাই না করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো ‘বিপজ্জনক’।  মিয়ানমারে এখন ফিরে গেলে কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা এবং এ ব্যাপারে তথ্য না পেয়ে তারা বিপর্যস্ত।

গত মঙ্গলবারও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করার আহ্বান জানান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠালে এ জনগোষ্ঠীর জীবন ফের ঝুঁকিতে পড়বে। তাদের বলপূর্বক ফেরত পাঠানো হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads